রক্তদহ বিলের নাম অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন। নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে রক্তদহ বিলটি সবারই নজর কাড়ে। এই বিলের নাম শুনলেই হয়তো গায়ে কাঁটা দেয়! আবার অনেকেই ভাবতে পারেন, আসলেই কি বিলের পানির রং লাল না-কি! তাহলে এর নাম কেন রক্তদহ বিল?
আসলে এই বিলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পলাশী পরবর্তী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। ১৭৮৬ সালে ফকির মজনু শাহের সঙ্গে এখানে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে সৈনিকদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল বিলের পানি। এরপর থেকেই বিলটির নামকরণ করা হয় রক্তদহ।
বগুড়া শহর থেকে এই বিলের অবস্থান ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে। রাণীনগরের পারইল এবং আত্রাই উপেজলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই বিলের অবস্থান। রক্তদহ বিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি অন্যতম বৃহৎ বিল।
জানা যায়, ১৩টি খাল ও অন্যান্য জলপথ রক্তদহ বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মূল বিলটি ১০৫ হেক্টর হলেও প্রায় ৫০ কিলোমিটার এর ব্যাপ্তি। রক্তদহ বিলের আশেপাশে আছে প্রচুর গাছপালা ও সবুজ অরণ্য। এমনকি পথের দু’ধারে দেখতে পাবেন সারি সারি খেজুর, তালসহ অজস্র গাছগাছালি।
বর্ষা মৌসুমে রক্তদহ বিলের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। কচুরিপানা, শাপলা, শালুক আর নানাবিধ জলজ উদ্ভিদ খেলা করে বিলের পানিতে। এই আদমদীঘি উপজেলা মাছের রেণু পোনা ও মাছ উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা।
চলার পথে মাছ চাষের অনেক পুকুর দেখতে পাবেন। এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই নিজস্ব নৌকা আছে। তাদের কেউ কেউ বিলে ঘোরার জন্য নৌকাগুলো ৭০-৮০ টাকা ঘণ্টা প্রতি ভাড়া দিয়ে থাকেন।
রক্তদহ বিলের মাঝে দেখতে পাবেন একটি বিরাট অশত্থ গাছ। আর তার নিচে আছে একটি মাজার। জানা যায়, ওই যুদ্ধে কোচ নামে একজন মুনি বা মহান ব্যাক্তির মৃত্যু হয়। ফকির মজনু শাহ তাকে বিলের মধ্যে সমাধিস্থ করেন। বর্তমানে সেখানে অশত্থ ও বট গাছের দ্বারা ছায়াশীতল একটি মাজার আছে।
এই রক্তদহ মাজারটি স্থানীয়ভাবে রক্তদহ দরগা নামে পরিচিত। কথিত আছে, বন্যার সময় চারপাশ ডুবে গেলেও মাজারের স্থানটি ভাসতে থাকে। প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সেখানে মানত করেন। তারা সিন্নি দেন শত বছরের বিশ্বাস থেকে।