প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার বাইরে অনেকেই খোঁজেন একটু প্রশান্তির ছোঁয়া। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলেতো কথাই নেই। রাজধানীর অদূরে খুব স্বল্প সময়ের জন্য কাছাকাছি ঘুরে আসার মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশের দেখা পাওয়া যায় গাজীপুরের প্রত্যন্ত এলাকায়। অর্ধ-শতাধিক বেসরকারি রিসোর্টে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থাকে সবসময়।
নক্ষত্রবাড়ী
গাজীপুরে অবস্থিত বেসরকারি রিসোর্টগুলোর মধ্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত ‘নক্ষত্রবাড়ী’। নক্ষত্রবাড়ী প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও অতি জনপ্রিয় নাম। প্রকৃতিপ্রেমীদের সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ঢাকার খুব কাছে একটি রিসোর্ট বানানোর কথা চিন্তা করে অভিনেতা তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত দম্পতি ১৪ বিঘা জমির ওপর ‘নক্ষত্রবাড়ী’ নির্মাণ করেন। পুকুরের পানির ওপর কাঠ-বাঁশের সমন্বয়ে নির্মিত ১১টি কটেজ। যার বারান্দায় বসে রাতের জোছনা বা পূর্ণিমা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে, অতি সৌন্দর্যের কটেজ এগুলো। এখানে বসে শোনা যায় ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, জোনাকির আলো ছড়ানো টিপ টিপ বাতি জ্বলা-নিভা। পুকুরের পশ্চিম পাশের পানির ওপর গজারী গাছ দিয়ে নির্মিত এসব কটেজ। কটেজগুলোর ওপর রয়েছে ছনের ছাউনি। পুকুরের পূর্ব পাশে ব্রিটিশ আমলের দরজা-জানালা সংবলিত একটি ঘর রয়েছে। একটু পুবে রয়েছে সুইমিং পুল। রয়েছে আরও একটি বিল্ডিং কটেজ। রয়েছে একটি কনফারেন্স রুম ও খাবার হোটেল। আর এই হোটেলে রয়েছে বাংলা, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, থাই, কন্টিনেন্টাল খাবার।
ভাড়া : পানির ওপর কটেজগুলো ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ১০ হাজার ৭৫২ টাকা। বিল্ডিং কটেজের ভাড়া কাপড়বেড ৮ হাজার ২২২ টাকা এবং টু-ইন বেড ৬ হাজার ৯৫৮ টাকা। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা।
ছুটি
ছুটি রিসোর্টে রয়েছে নৌভ্রমণের ব্যবস্থা, বিরল প্রজাতির সংরক্ষিত বৃক্ষের বনে রয়েছে টানানো তাঁবু। ছনের ঘর, রেগুলার কটেজ, বার্ড হাউস, মাছ ধরার ব্যবস্থা, হার্বাল গার্ডেন, বিষমুক্ত ফসল, দেশীয় ফল, সবজি, ফুলের বাগান, বিশাল দুটি খেলার মাঠ, আধুনিক রেস্টুরেন্ট, দুটি পিকনিক স্পট, গ্রামীণ পিঠা ঘর, বাচ্চাদের জন্য কিডস জোনসহ সারা দিন পাখির কলরব, সন্ধ্যায় শিয়ালের হাঁক, বিরল প্রজাতির বাঁদুড়, জোনাকি পোকার মিছিল ও আতশবাজি, ঝিঁঝিঁ পোকার হৈচৈ। আর ভরা পূর্ণিমা হলে তো কথাই নেই। রিসোর্টের নিয়ম অনুসারে চাঁদনী রাতে বিদ্যুতের আলো জ্বালানো হয় না। ভরা পূর্ণিমা এবং রিমঝিম বর্ষা উপভোগ করার জন্য এই ছুটিই হচ্ছে অন্যতম রিসোর্ট। ভেতরের বড় বড় ৩টি লেক দেখলে মনে হয় যেন একেকটি বিশালাকার বিল-ঝিল। আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডিমিন্টন খেলার মাঠ রয়েছে। এসি, নন-এসি ২১টি কটেজ রয়েছে। এখানে দুই ধরনের থাকার ব্যবস্থা আছে। পরিপূর্ণ গ্রামীণ আমেজের প্রাণময় লোকজ বসবাস অথবা ইট কাঠ বালুর কটেজ। রয়েছে সুইমিং পুল। রয়েছে দুটি কনফারেন্স রুম। খাবার হোটেলে বাংলা, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, থাই, কন্টিনেন্টাল খাবার পাওয়া যায়।
ভাড়া : কটেজগুলো ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। কনফারেন্স রুম ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং পিকনিকের জন্য ১০০ থেকে ২০০ জনের ভাড়া ৯০ হাজার টাকা।
অঙ্গনা
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হওয়ায় এই রিসোর্টের নামকরণ করা হয়েছে ‘অঙ্গনা’। গ্রামীণ সৌন্দর্যের বেসরকারি রিসোর্টস অঙ্গনার মালিক উপমহাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার ভাই সৈয়দ আলী মুরাদ ২০০৪ সালে ১৮ বিঘা জমির ওপর এটি নির্মাণ করেন। যার অবস্থান গাজীপুরের কাপাসিয়ার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে। নগর জীবনে একাধারে চলতে চলতে ক্লান্তি এসে যায় মনে। আর এই ক্লান্তি দূর করতে রাজধানীর অদূরে কাপাসিয়ার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারি এই রিসোর্ট ‘অঙ্গনা’। ভাওয়াল পরগনার লালমাটির পাহাড়বেষ্টিত এই রিসোর্ট। পুরো রিসোর্ট এলাকা একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘেরা। এই নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে পুরো রিসোর্ট এলাকায়। প্রাকৃতিকভাবে সাজানো বাগান। এখানে রয়েছে দুটি খেলার মাঠ, রয়েছে দুটি বিশালাকার পুকুর। মিটিং, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং ব্রেইন স্টরমিং বৈঠকের ব্যবস্থা। রয়েছে শিশুদের জন্য পুরো কেটারিংয়ের ব্যবস্থা। বিশাল জলাশয় রয়েছে। একটি সুইমিং পুল, একটি ব্যাডমিন্টন কোট ও একটি ডির পার্কও রয়েছে এখানে। অঙ্গনার সবচেয়ে আকর্ষণ হচ্ছে সুন্দরবনের অপরূপ হরিণ। বিশালাকৃতির দুটি খাঁচায় রয়েছে অন্তত ১৬টি হরিণ। সঙ্গে হরিণের বাচ্চাও রয়েছে কয়েকটি। কয়েকটি বাঁশ বাগান পুকুরপাড়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। রয়েছে মাটির ঘর, আকর্ষণীয় একটি ফোয়ারা ও সুইমিং পুল। যা আগতদের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। এখানে রয়েছে একটি জামে মসজিদ। রয়েছে দুটি সড়কের নামফলক। এর মধ্যে একটি দীনা লায়লা এবং অপরটি এমদাদ সরণি। একটি বাংলোয় ১৪টি কক্ষ রয়েছে। আগত দর্শনার্থীদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে ১৮ জন কর্মচারী রয়েছে। এখানে শ্রীলঙ্কানরা বেশি আসেন। সময় পেলে ঘুরে আসতে পারেন।
ভাড়া : কটেজগুলোর প্রতি কক্ষ ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ৫ হাজার টাকা। পিকনিক বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য পুরো অঙ্গনার ভাড়া ৭০-৮৫ হাজার টাকা।
সোহাগপল্লী
১১ একর উঁচু-নিচু জমিতে সবুজে ঘেরা এই রিসোর্টের অন্যতম আকর্ষণ হলো জলাশয়ের ওপর নির্মিত অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত ঝুলন্ত সাঁকো আর এর পিলার ও বেলকনিতে খোঁদাই করা বিভিন্ন কারুকাজ- যা আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। বিশাল এক জলাশয়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সাঁকো থাকায় দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে বেশি। জলাশয়ের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি দ্বিতল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টটির নাম রাখা হয়েছে মেজবান। শুধু তাই নয়, কৃত্রিমভাবে একটি লেক নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে বর্ষা বা শুষ্ক সবসময়ই পানি থাকে। আর এই লেকের পানিতে বিভিন্ন জাতের মাছের বিচরণ দেখা যায়। রয়েছে উন্নতমানের কয়েকটি কটেজ। কটেজগুলোর আকর্ষণও কম নয়। কটেজগুলো এমনভাবে নির্মিত, দেখতে মনে হয় যেন ইতালির রোম শহরের একটি সাজানো গ্রাম। কটেজগুলোর ঠিক সামনে দিয়ে বয়ে গেছে লেক। রয়েছে একটি সুইমিং পুল আর যার নিচে এক পাশে রাক্ষসের হাঁ করা মুখমণ্ডল, উপরে সুন্দরী ললনার কোলে জলভর্তি কলসি এবং পাহাড়ের সামনে দু-পাশে দুটি করে জিরাফ ও হরিণের প্রতিকৃতিসহ এমন অনেক প্রতিকৃতি রয়েছে।
ভাড়া : দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা।
ড্রিম স্কয়ার
গাজীপুরের মাওনার অজহিরচালা গ্রামে ‘ড্রিম স্কয়ার’ নামে বিশালাকৃতির বেসরকারি রিসোর্ট রয়েছে। ১২০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট। এর প্রধান আকর্ষণ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজের সমারোহ। ড্রিম স্কয়ারের আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে তেলের ঘানি, ডেইরি ফার্ম, মৎস্য হ্যাচারি, কম্পোস্ট সার প্লান্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট। ড্রিম স্কয়ারের আলাদা বৈশিষ্ট্য হলো রেস্টুরেন্টের খাবারের সবজি এর ভেতরেই চাষাবাদকৃত, যা সম্পূর্ণ সার ও কীটনাশকমুক্ত। রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিশালাকৃতির কয়েকটি লেক। রয়েছে ১৬টি ছোট-বড় পুকুর। ভেতরে সবুজে বেষ্টিত বাগানের মাঝখানে রয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশের দুটি প্রতিকৃতি। আর বিভিন্ন গাছে রয়েছে বানরের প্রতিকৃতি। এখানে নানান প্রজাতির পাখির অভয়াশ্রম রয়েছে। ড্রিম স্কয়ারে প্রতি বছর শীতের সময় অতিথি পাখির মেলা বসে। আছে একটি রেস্টুরেন্ট, রয়েছে ওয়াই-ফাই সুবিধা। এখানে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা। এখানে ২০টি উন্নতমানের কটেজ রয়েছে। এখানে টু-ইন কেবিন, টেরাস, অনার্স, গ্রিন, ইকো এমন বিভিন্ন মানের কটেজ রয়েছে।
ভাড়া : পিকনিক বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ৫০ জনের মধ্যে জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। ৫০ জনের অধিক হলে তুলনামূলক জনপ্রতি কম হয়। ডিলাক্স কটেজ ভাড়া ৪০ হাজার আর রেগুলার কটেজ ভাড়া ৬ হাজার ৩২৫ টাকা।