এই বর্ষায় নীল রঙের শাড়ি না হলে কি হয়? নীল যেন এই ঋতুর আপন রং।
এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়- কবির ভাষায় বর্ষার এসব দিনকাল শুধু মানব আবেগ ও মনে প্রভাব ফেললেও বাস্তবে ফেলে আমাদের বসন এবং ফ্যাশনেও। নীল রঙের শাড়ি সে কারণেই প্রাধান্য পায়। আর যদি থাকে বর্ষার বিভিন্ন মোটিফ, কদম, বেলি, মেঘ, বৃষ্টি, জল, গান, কবিতা- তবে তো ষোলোকলা পূর্ণ। গানের কথায়- ভালোবাসা তারপর দিতে পারে গত বর্ষার সুবাস, আর নীল শাড়ি? নারীদের জন্য এই একটি নীল শাড়িই যেন এনে দিতে পারে বর্ষার আমেজ, আবেগ, সুবাস, সৌন্দর্য এবং প্রেম। তাই-বা কম কীসে! সবাই হুমায়ূন আহমেদের চরিত্র রূপার মতো হয়ে উঠতে না চাইলেও নীল ভালোবাসেন বলেই পরেন। নিজেকে সাজিয়ে তোলেন নীলের বিভিন্ন আবরণে। নীল যেন চোখেও আরাম দেওয়ার মতো একটি রং। সেই নীলেরও আবার আছে বিচিত্র রকমের শেড! গাঢ় নীল, আকাশি, সবুজ-নীল, নেভি ব্লু, হালকা নীল, কালচে নীল আর ময়ূরকণ্ঠী নীল। বর্ষার এই মৌসুমে যে কোনো নীল বেছে নিতে পারেন পছন্দমাফিক। নামকরা ফ্যাশন হাউস, বুটিক শপ এমনকি অনলাইন পেজের ডিজাইনাররাও এ সময় এই রং রাখেন তাদের প্রাধান্য হিসেবেই।
কালিদাসের মেঘদূত হোক কিংবা রবিঠাকুরের কাব্যিক বিরহ এবং উদাসীনতার বর্ষার ছাপ পড়ে পোশাকেও। আর এই পোশাকের ক্ষেত্রে সবার আগে যা আসে তা হচ্ছে শাড়ি। নকশাকাররা বর্ষার কদম থেকে শুরু করে শাপলা পুকুর ও বেলিফুল, মেঘলা আকাশ, নদী-নৌকা সবটাই ফুটিয়ে তোলেন তাদের শাড়ির আঁচল ও পাড়ে। শাড়ির পাড়ে অনেক সময় নিয়ে আসা হয় কবির কবিতাও। বলছি হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ির কথা। হাতে আঁকা শাড়ি আজকাল বেশ চলছে। বর্ষাকাল যেহেতু এসেই পড়েছে, তাই এর চাহিদা এখন প্রচুর। হাতে আঁকা শাড়ির তন্তু হিসেবেও বেশি ব্যবহূত হয় সুতি, মসলিন ও হাফ সিল্ক্ক। এদের জমিন থাকে মসৃণ এবং এ কারণে রং খুব সহজেই বসিয়ে ফেলা যায়। খসখসে তন্তু এ ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধার। রং ঠিকমতো তো বসতে চায়ই না, উঠে যাওয়ারও ভয় থাকে সহজে। সুতি শাড়িও অনেক নকশাকার তাদের পছন্দসই হিসেবে বেছে নেন। হ্যান্ড পেইন্টের পাশাপাশি থাকে ব্লক ছাপার শাড়ির চাহিদাও। কাঠের ব্লক দিয়ে বিভিন্ন নকশা ছেপে বসিয়ে দেওয়া হয় শাড়ির জমিন ও আঁচলে।
ইদানীং যদিও প্রায়ই দেখা যাচ্ছে কালো মেঘের ঘনঘটা, তারপরই আকাশ কালো করে বৃষ্টির আগমন। তবু প্রায়ই থাকছে ভ্যাপসা গরম। এই গরমে বেছে নিতে পারেন মোম বাটিক বা টাই-ডাই করা সুতির শাড়ি। টাই-ডাই হচ্ছে কাপড় বেঁধে রঙে চুবিয়ে করা এক ধরনের বাটিক। সব রঙেই করা যায় এ বাটিক। তবে বর্ষাকালের কারণে এখন প্রাধান্য পাচ্ছে নীল, সাদা, আকাশি, ছাই, ধূসর ইত্যাদি।