শাড়িতেই মানায় নারী। ১২ হাত লম্বা এই একটি কাপড় সত্যিকার অর্থেই নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে পারে বহু গুণ। প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে নানা রকম শাড়ির ব্যবহার। রয়েছে সুতি, সিল্ক্ক, খাদি, তাঁত, মসলিন, বুটিক, টাই-ডাই, ব্লক ছাপা, তসর, জর্জেটসহ নানা ধরনের শাড়ি। আর ঢাকাই জামদানির কথা তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। তবে এই শতকের গোড়ার দিকে জর্জেট শাড়ির খুব চল ছিল। বলিউডের সুস্মিতা সেনের আইকনিক চরিত্র 'মিস চাঁদনি' থেকে শুরু করে আমাদের দেশি চলচ্চিত্রের নায়িকা- সবার পরনেই দেখা গিয়েছিল জর্জেটের শাড়ি। আজকাল আবার হাল ফ্যাশনের অংশ হতে দেখা যাচ্ছে জর্জেটের শাড়িকে। বর্ষাকালের হিসেবেও জর্জেট শাড়ি প্রাধান্য পাচ্ছে। অনেকে বলে থাকেন, জর্জেট নাকি জলে সয়ে যায়। কথা সত্য। এ কাপড় জল শুষে নিতে জানে সহজেই। তাই বৃষ্টির পানিতে ভিজলেও গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকে না এবং অতি দ্রুত পানি শোষণ ক্ষমতা থাকায় শুকিয়েও যায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। কাদা এবং দাগ লেগে গেলে পরিস্কার করা যায় চটজলদি।
ডিজাইনার্স ডোরের স্বত্বাধিকারী পিয়াল হোসাইন বলেন, 'যেহেতু এখন বর্ষাকাল, সে কথা মাথায় রেখে জর্জেট শাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। জর্জেট শাড়ি এ সময় পরতে বেশ আরামদায়ক, একই সঙ্গে গর্জিয়াস। যদিও এই সিজনে সাদা-কালো রং খুব কমন, তবুও বর্ষাকালের কথা মাথায় রেখে অন্যান্য রংকে প্রাধান্য দিয়েছি। এর মধ্যে লাল, হলুদ, কমলা ছাড়াও বিভিন্ন রঙের শাড়ি আনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রিন্টের কাজ, ফ্লাওয়ার মোটিফ, বল প্রিন্ট নিয়ে কাজ করা হয়েছে; যা কিনা এখনকার সময়ে একটি ট্রেন্ড ডিজাইন। সবার কথা এবং সব সিজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজাইন করার চেষ্টা করেছি। এই জর্জেট প্রিন্ট শাড়ি ফ্যাশনে এনে দেবে ট্রেন্ডি লুক।'
গাউছিয়া, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, হকার্সের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমল, মিরপুরের নামকরা বেনারসি পল্লি; যে কোনো স্থানেই পেয়ে যাবেন পছন্দমতো জর্জেটের শাড়ি। শাড়ির তালিকায় রয়েছে ভারতীয় চুনুরি ও টাই-ডাইয়ের কাজ করা জর্জেটের শাড়ি। এগুলো পেয়ে যাবেন বিভিন্ন অনলাইন পেজে। দাম শুরু হয় সাধারণত ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্য থেকেই। তবে জর্জেটের শাড়ি পছন্দমতো গজ কাপড় কিনে বানিয়ে নেওয়া সব চাইতে সুবিধাজনক।
বাজারে ওয়েটলেস, শিফন, মার্বেলসহ অনেক রকম জর্জেট পাওয়া যায়। রয়েছে আমদানিকৃত ভারতীয় ও চীনা জর্জেটও। ওয়েটলেস জর্জেট সাধারণত কামিজ, টিউনিক কিংবা টপসের ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়। তবে শাড়ির ক্ষেত্রেও বেছে নিতে তেমন অসুবিধা নেই।
শাড়িটিকে জমকালো রূপ দিতে হাতে কাজ করে নিতে পারেন। যদি মনে হয়, শাড়িজুড়ে নকশা করলে তা দেখতে অনেকটাই হিজিবিজি লাগবে এবং প্রতিদিন ব্যবহারের অনুপযোগী, তবে পছন্দ অনুসারে কিছু কিছু অংশে বিশেষত বুক ও কোমরের দিকটিকে প্রাধান্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারেন বিভিন্ন রকম নকশা। এ ছাড়া কাঠের ব্লক ছাপা তো রয়েছেই। এটি অত্যন্ত সহজ, সাশ্রয়ী এবং টেকসই একটি প্রক্রিয়া।
যদি ভারী জর্জেট হয়, সে ক্ষেত্রে বেশি জমকালো জরি, চুমকি, পাথর কিংবা সুতার কাজ না করাই ভালো। এতে শাড়ি আরও ভারী হয়ে যায়, যা পরতে এবং ঠিক রাখতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। শিকার হতে হয় বিড়ম্বনারও। কাজেই ভারী কাজ করাতে চাইলে ওজনে হালকা জর্জেট বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
ইদানীং ফ্লোরাল প্রিন্ট বা ফুলেল নকশা ছাপা জর্জেট জামা থেকে শুরু করে শাড়ি সব ক্ষেত্রেই বেশ চলছে। ফ্লোরাল প্রিন্টের মাঝে চুমকি বসিয়ে বা সিকোয়েন্সের কাজ করে নিতে পারেন। বসাতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী পাথর। এতে শাড়িটি বেশ চকচকে দেখাবে। আবার সিম্পল রাখার জন্য চাইলে শুধু চিকন লেস বা পাড় লাগিয়ে নিতে পারেন। এতেও সুন্দর লাগবে। তবে পাড়ের দিকটায় ফল্স লাগাতে ভুলবেন না।
একরঙা জর্জেটের শাড়ি কাতান কিংবা কারচুপি করা কাপড়ে তৈরি ব্লাউজ দিয়ে পরুন। বেশ গর্জিয়াস লুক দেবে। শাড়িতে কারচুপি করতে চাইলে নিজেও করতে পারেন কিংবা দোকানে করতে দিন। ঘরেই পাথর বসাতে চাইলে গরম আয়রন বা ইস্ত্রির হিট ব্যবহার করতে পারেন।