ফ্যাশনে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন ধারা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাকেও আনছে নতুনত্বের ছোঁয়া। তরুণ প্রজন্মের ঝোঁক এখন পাশ্চাত্য ফিউশন ফ্যাশনের দিকে। সেদিক থেকে এগিয়ে এখন কুর্তি-কামিজ। সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি যে কোনো উৎসবে কুর্তিই যেন হয়ে উঠছে একমাত্র পোশাক। এবারে ঈদেও অন্যান্য পোশাকের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে কুর্তি বা সিঙ্গেল কামিজ।
একই কাটছাঁট বেশিদিন অনুসরণ করেন না ফ্যাশন ট্রেন্ড সেটাররা। কুর্তি বা সিঙ্গেল কামিজের বৈচিত্র্যের কারণে তরুণীদের কাছে এর ব্যবহার বাড়ছেই। সবচেয়ে সুবিধা হলো, এসব পোশাক যে কোনো সালোয়ার বা প্যান্টের সঙ্গে মিলিয়ে পরা সম্ভব। তাই একেক রকম প্যান্টে ভিন্ন ভিন্ন লুক আসে। কুর্তায় এম্ব্রয়ডারি, প্রিন্টের কাজ খুব বেশি হলে তা বেমানান। বডিতে হালকা কাজই ট্রেন্ডি। কুর্তায় বেশি নতুনত্ব এসেছে বটমে। দেশীয় কামিজে প্রায় একই রকম কাটিং দেখা গেছে।
ফ্যাশনপ্রিয় তরুণীদের প্রথম পছন্দ এখন কুর্তি বা সিঙ্গেল কামিজ। চলতি ধারার ফ্যাশনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। লং কুর্তি, প্রিন্ট কুর্তি ও পকেট দেওয়া নানা ডিজাইনের কুর্তি নিয়ে হাজির হয়েছে ফ্যাশন হাউসগুলো। ঈদকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউস লা রিভেও এসেছে কুর্তির নতুন কিছু কাট ও প্যাটার্ন। এগুলো একদিকে যেমন সময়োপযোগী, অন্যদিকে যে কোনো বয়সের জন্য মানানসই হয় পোশাকটি। কুর্তির প্রচলন অনেক আগে থেকে হলেও নতুনত্ব এনেছে এর কাট। এসব কামিজে নেকলাইন, বটমলাইন ও হাতা- সবটাতেই এসেছে বৈচিত্র্য। কুর্তির কাটিংয়ে প্রাধান্য পেয়েছে ঢোলা হাতা। তবে এবারের উৎসবে রয়েছে প্রিন্টের প্রাধান্য। বৃষ্টির আবহ রয়েছে বলে এবার পোশাকে দৃশ্যমান নীল ও সবুজের সমারোহ। লিনেন, কটন, শামু সিল্ক্কের পাশাপাশি জর্জেট কাপড় বেশি ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকের ফেব্রিক হিসেবে।
ছিমছাম ফ্যাশনে কুর্তি কামিজ যেন পারফেক্ট ফ্যাশন। ট্রেন্ড সেটাররা তাই বেশি মনোযোগী কুর্তি ও টপস নিয়ে। পশ্চিমা পোশাকের একটা ছোঁয়া রয়েছে এসব পোশাকে। সব ধরনের আবহাওয়ায় এসব পোশাক উপযোগী। নতুন ঢঙের কুর্তি কামিজগুলো দেখতে বেশ নান্দনিক। কুর্তি বা লম্বা কামিজের বটমে ইউ, ভি, উল্টা ভি, বোট কাটিং, চওড়া বা স্ট্রেইট প্যাটার্ন, বাটারফ্লাই ইত্যাদি থাকতে পারে। কোনোটি আবার গোল ঘেরওয়ালা। হাতার ডিজাইনে ঢিলেঢালা, কার্ভ স্লিভ, বেল স্লিভ উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে গলার ডিজাইনে থাকে সেমি বোট নেক, পোর্ট্রেট, জুয়েল, স্কয়ার, গেদার্ড নেক, সেট ইন স্লিভ নেকের মতো প্যাটার্ন। তা ছাড়া পাশ্চাত্য ডিজাইনের দেখা মেলে দেশীয় ডিজাইনারদের হাতে তৈরি এসব কামিজে। স্ট্রিট ফ্যাশনে গরমের সময়ে সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি কুর্তি বা সিঙ্গেল কামিজের কদর অনেক। সিঙ্গেল কামিজের ডিজাইন, কাটিং, রংসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
উৎসবের জন্য বেছে নিতে পারেন সিল্ক্ক, মসলিন, এন্ডি সিল্ক্ক, তসর, নেট, জর্জেটসহ নানা গর্জিয়াস কাপড়। কামিজ বা কুর্তির ক্যানভাসে নকশা করা হচ্ছে কারচুপি, স্প্রে, সিকুইনসহ নানা মাধ্যমে। মূলত স্লিভলেস পোশাক টিনএজার ও তরুণীদের ভালো মানায়। কুর্তি স্টাইলের লম্বা কামিজ বা সিঙ্গেল কামিজ আটপৌরে বা বাইরের ফ্যাশনের নতুন ধারা। রং নির্বাচনে সবকিছুর সঙ্গে ম্যাচ করে পরা যাবে। তবে এম্ব্রয়ডারির কাজ করা প্যাটার্ন বেজ্ডের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট সহজ। যাদের প্রতিনিয়ত নানা কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় তাদের কাছে সিঙ্গেল কামিজের চাহিদা একটু বেশি। কেননা, ব্যস্তময় জীবনে সময় বের করে নিয়ে কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না ও সালোয়ার কেনা খুবই কষ্টকর। তাই তো তরুণীরাও সিঙ্গেল কামিজ বা কুর্তিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এসব পোশাকের সঙ্গে সাজগোজের ব্যাপারে খুব বেশি মনোযোগী না হলেও চলে। সাদামাটা সাজসজ্জা উপযুক্ত। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অ্যান্টিক ম্যাটেরিয়ালের মালা, ব্রেসলেট বা চুড়ি, ঘড়ি, পুঁতির মালা, বিডসের মালা পরতে পারেন। লা রিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্নুজান নার্গিস জানান, আমরা মেয়েদের পোশাকের নতুন একটি কালেকশন নিয়ে এসেছি নার্গিসাসের মাধ্যমে। এখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কামিজ এবং কুর্তিতে।
পশ্চিমা পোশাকের আদলে ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে বেশিরভাগ কুর্তি কামিজে। নতুন কাট বা প্যাটার্ন পেতে চাইলে ঢুঁ মারতে হবে লা রিভ, কিউরিয়াস, রেড, ওকোড, মিথ, জেন্টাল পার্ক, এক্সট্যাসি, ক্যাটস আই, টেক্সমার্ট, সেইলর, আর্টিসান এবং স্পার্ক গিয়ারে। এ ছাড়া যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটিসহ দেশের প্রায় সব মার্কেটেই পাবেন এই কুর্তি বা কামিজ। ব্র্যান্ড শপ থেকে কুর্তি কিনতে পারবেন এক হাজার ২৫০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায়। আর সিঙ্গেল কামিজ মিলবে এক হাজার ৮৫০ থেকে তিন হাজার টাকায়। এ ছাড়া মনের মতো কুর্তি মিলবে নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচক এবং ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে।