সুন্দর চুল মানেই সুন্দর মন। চুল ভিজে চিটচিটে রুক্ষতায় পরিপূর্ণ, কারই তা ভালো লাগে। তার মাঝে এসে পড়েছে বর্ষাকাল। হঠাৎ এসে পড়া বৃষ্টিতে চুল ভিজে হয়ে যায় স্যাঁতসেঁতে এবং দেখা দেয় চুল পড়া, গোড়া নড়বড়ে হয়ে যাওয়া, উকুনের প্রকোপসহ নানা ধরনের সমস্যা। এ সমস্যাগুলো আপাতদৃষ্টিতে ছোট বলে মনে হলেও পরে সৃষ্টি করে নানা ধরনের বিপত্তি। বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে প্রথম বৃষ্টিতে না ভেজানোই চুলের পক্ষে কল্যাণকর। বছরের প্রথম বৃষ্টিতে থাকে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ও ক্ষতিকর পদার্থ; যা আপনার চুলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পিছপা হবে না একবিন্দুও। যদিও 'বছরের প্রথম বৃষ্টি, এক কাপ চা' এসব বলতে কাব্যিক ভাব চলে আসে, তবু আপনার চুলের ভয়াবহ ক্ষতি কিন্তু এই বৃষ্টিই করতে পারে।হএ সময়ে চুলের বিশেষ যত্ন নিয়ে বিন্দিয়া এক্সকু্ল্লসিভ বিউটি কেয়ারের রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি জানান, বর্ষায় চুলের যত্নে তেলের কোনো বিকল্প নেই। সুন্দর চুল পেতে হলে সপ্তাহে অন্তত তিন-চার দিন চুলে তেল দিতে হবে। রাতে হঘুমানোর আগে তেল দেওয়ার অভ্যাস করুন। নারিকেল তেলের তো কোনো বিকল্প হতেই পারে না। পাশাপাশি আমন্ড অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, তিলের তেল- এগুলো মিশিয়ে চুলে দেবেন। ক্যাস্টর অয়েল নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এই সময় সপ্তাহে এক দিন চুলে অবশ্যই হট অয়েল ম্যাসাজ করবেন। হট অয়েল ম্যাসাজ আপনার চুলের স্কাল্পের কাজে লাগবে। এই সময়ে প্রয়োজন ছাড়া চুল খোলা না রাখাই ভালো। এতে চুল দূষণের হাত থেকে বাঁচানো যায়। বর্ষায় ভেজার পর চুল শুকিয়ে ভালোভাবে বেণি বা খোঁপা করে রাখুন। মনে রাখবেন বর্ষার পানি কিন্তু চুলের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই বর্ষায় বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন এবং এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে অনেকক্ষণ থাকা থেকে বিরত থাকুন। এয়ারকন্ডিশনারের ঠান্ডা হাওয়া এই স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় আপনার চুলের ভীষণ ক্ষতি করতে পারে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্নে হেয়ার মাস্কহবর্ষাকালে বাইরে যাওয়া অনেক সময়ই হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য। আর বাজেটের ব্যাপারটির দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। তাই বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক উপকরণ মিশিয়ে ঘরে বসেই চটজলদি বানিয়ে নেওয়া যায় বিভিন্ন রকম হেয়ার মাস্ক ও আরও অনেক উপাদান, যা আপনার চুলে জোগান দেয় পুষ্টির। এসব ঘরোয়া পদ্ধতিকেও রূপবিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন এক নিজস্ব অভিনব রূপ। বর্ষায় চুলের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারে- এমনই কিছু ঘরোয়া মাস্কের সাহায্যে চলুন জেনে নিই, যেগুলো খুবই সহজলভ্য এবং নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের সমস্যা দূর হয়।
ডিম চুলের যত্নের একটি অনন্য উপাদান। সপ্তাহে দু'দিন না হলে অন্তত এক দিন চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী ডিম ফেটিয়ে চুলে দিয়ে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। গন্ধের সমস্যার জন্য অনেকে রূপচর্চায় ডিমের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কিন্তু মনে রাখবেন, ডিম কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এ ছাড়া কন্ডিশনার যে সব সময় নামকরা ব্র্যান্ডেরই হতে হবে তা কিন্তু নয়। কন্ডিশনার ফুরিয়ে গেলে যদি তখনই কিনতে যেতে না পারেন, প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে এক মগ পানিতে দুই-তিন চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে চুলে দিয়ে দুই মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে চুলের গোড়ায় না লাগালেই ভালো।হযারা চুলের কালার এবং পুষ্টি দুটিই চান, তারা মেহেদি পাতা বাটা এবং চার চা চামচ কফি পাউডার মিশিয়ে চুলে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করবেন না ওইদিন। যাদের চুলে রং করা, তারা এ সময় চুলে কোনো প্রকার হিট বা তাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আপনার চুলের ক্ষতি তো হবেই। রং নষ্ট হয়ে যাওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
এই সময়ে মাথায় খুশকি বা ফুসকুড়ি থাকলে নিমপাতা ও মেথি একসঙ্গে বেটে সপ্তাহে দুই দিন লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবেন। এটি ছাড়াও মেথি কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রেও উপকারী। নারিকেল তেলে মেথি ভিজিয়ে রেখে দিন। তা দু-এক দিন পরপরই চুলে লাগান। গোড়ায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে ভুলবেন না। এতে করে চুলের গোড়া ফাঙ্গাসমুক্ত থাকবে। জীবাণুর আক্রমণ থেকেও রক্ষা পাবে।
এই সময়ে চুল সিল্ক্কি করতে চাইলে ডিম ফেটিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। তাছাড়া ডিম এবং মধুর মাস্ক চুলের ভলিউম বাড়াতে সাহায্য করে। এতে আপনি পাবেন ঝরঝরে সুন্দর চুল।হএই বৃষ্টি-বাদলার দিনের একটি অব্যর্থ উপাদান হলো অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর শাঁস বা জুস। এর সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন। এতসব যদি করার সময় না পান, তবে অ্যালোভেরার রস বের করে চুলের গোড়ায় ভালোমতো লাগিয়ে নিন। এতেও কিছুটা ফল পাবেন।
বর্ষায় পেঁয়াজের রস চুল গজাতে সাহায্য করে। ১৫ দিনে একবার মাথার তালুতে তুলায় করে পেঁয়াজের রস লাগাবেন। পেঁয়াজের রস মাথার স্কাল্পে ঘষে ঘষে লাগাতে হবে। লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এই সময়ে যারা প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে চান তারা রিঠা সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেটির পানি ছেঁকে শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটা জিনিস খেয়াল করবেন, রিঠার পানি ব্যবহারের সময় সাবধানে থাকবেন কোনোভাবেই যেন চোখে না যায়। তাহলে বেশ জ্বালাপোড়া করবে।
এ তো গেল চুলের বাইরের যত্নের কথা। শুধু বাহ্যিক যত্ন-আত্তি পেলেই যে চুল ভালো থাকবে তা কিন্তু একদমই নয়। সুন্দর ও মসৃণ চুল পেতে হলে খাওয়াদাওয়াতেও মেনে চলতে হবে বেশ কিছু নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধ। প্রোটিন নিয়ম করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাছ, ডিম এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার চুলের জন্য ভালো। শাকসবজি এবং ফলও খেতে হবে প্রচুর। পেটের সমস্যা থেকে অনেক সময় চুল পড়ে, তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন মেশিন, কার্লার, স্প্রে, হেয়ার চক, হেয়ার কালার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে তার পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন 'ই' ক্যাপসুল সরাসরি তেলে মিশিয়ে চুলেও ব্যবহার করে থাকেন অনেকে।