যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হয় ফ্যাশন। বদলে যায় মানুষের পছন্দ। আসে নতুন ধারা কিংবা যোগ হয় ফিউশন। তবে পুরোনোর সঙ্গে নতুনের মিশেল ফ্যাশনের একটি চিরাচরিত অনুষঙ্গ। এতে সংস্কৃতির ছোঁয়া যেমন থাকে, দেখতেও লাগে আপটুডেট। এই হাল ফ্যাশনেরই একটি অংশ হচ্ছে পোশাকে কবি-সাহিত্যিক ও গুণী ব্যক্তিদের মুখ ফুটিয়ে তোলার ব্যাপার। শুধু অবয়বই নয়, পাশাপাশি ফুটিয়ে তোলা হয় চিঠি, কবিতার লাইন, উক্তিসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কিছুর স্ট্ক্রিন প্রিন্ট। এতে একঘেয়ে পোশাকে আসে নতুনত্ব। দেখা মেলে সৃজনশীলতার। পরতেও ভালো লাগে। যার অবয়ব বা কবিতার লাইন ছাপিয়ে তৈরি হয় এসব পোশাক; পরিধানকারী যদি তার গুণমুগ্ধ ভক্ত হন, তবে তো কথাই নেই।
এসব পোশাকের তালিকায় প্রথম সারিতেই দেখা মেলে টি-শার্টের। টি-শার্ট খুব আরামদায়ক এবং রোজকার উপযোগী একটি পোশাক। তাই আমাদের দেশের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিবেচনায় তরুণদের কাছে অন্যান্য পোশাকের চেয়ে তুলনামূলক প্রাধান্য পায়। করপোরেট অফিসের মিটিং ছাড়া সর্বক্ষেত্রে দিব্যি চালিয়ে দেওয়া যায় এ পোশাক। টি-শার্টে অবয়ব ফুটিয়ে তোলা খুব কঠিন কিছু নয়। হোক তা স্ট্ক্রিন প্রিন্ট কিংবা রং-তুলির আঁচড়ে। অবয়ব আঁকা বা কবিতার লাইন লেখা এসব টি-শার্টে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিশেষ জনপ্রিয় হলেন মেক্সিকান পেইন্টার ফ্রিদা কাহলো এবং তার আত্মপ্রতিকৃতির স্ট্ক্রিন প্রিন্ট। ডাচ্ পেইন্টার ভিনসেন্ট ভ্যানগগ ও তার বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'দ্য স্টেরি নাইটস', বিপ্লবী চে গুয়েভারার প্রতিকৃতি ইত্যাদি। সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে 'বিটলস' ব্যান্ড এবং এর গায়করাও ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কে-পপ। এসবের মধ্যে বাঙালি শিল্প-সংস্কৃতি অনুরাগীদের কাছে এগিয়ে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার গানে যেমন এখন যোগ হচ্ছে ফিউশন আর পাশ্চাত্য সংগীত ঘরানার ছোঁয়া; পাশ্চাত্য পোশাকেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে তো ক্ষতি নেই। নকশাকারদের সৃজনশীলতার খোরাক জোগায় নতুনত্ব। স্বকীয়তা ও সংস্কৃতি তো আছেই।
রবিঠাকুরের গান এবং কবিতা এখনকার তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের কাছে অপরিচিত থাকলেও অনুরাগী-ভক্তের সংখ্যাও কম, তা কিন্তু নয়। বিশেষত অনেকেই তার গান শোনেন এবং তা নিয়ে চর্চা করেন। তবে ফ্যাশনে রবিঠাকুরকে তুলে আনাকে অবশ্যই ডিজাইনারদের এক অনন্য প্রয়াস বলতে হবে। 'নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ' কবিতা থেকে শুরু করে 'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই', 'একলা চলো রে' গানের চরণ- সবই এখন ফুটে উঠছে টি-শার্টে। হোক তা রং-তুলি বা স্ট্ক্রিন প্রিন্টের। নব্বইয়ের দশকের শেষ প্রান্তে এসে এ বিষয়টি ট্রেন্ডি করে তোলে 'নিত্যউপহার'। তখন থেকে এখন পর্যন্ত কম-বেশি এসব টি-শার্ট ট্রেন্ডে রয়েছে। তাদের রয়েছে হাজারখানেক টি-শার্টের ডিজাইনের সমাহার। তবে রবিঠাকুরের গান, কবিতা এবং গান সংবলিত টি-শার্ট কবিতা ও সংগীতপ্রেমীদের কাছে সবকিছু ছাপিয়ে পায় বিশেষ মূল্য। এসব টি-শার্টের দাম শুরু হয় ৩৫০ থেকে। যায় ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন রেঞ্জে।
টি-শার্ট ছাড়াও রবিঠাকুরের অবয়ব এবং কবিতা ছাপানো পোশাক পাওয়া যাবে মেঘবসনা, কালার ক্রেজসহ বিভিন্ন অনলাইন পেজে। প্রথম সারিতে রয়েছে মানাস। চাইলে সহজেই একরঙা টি-শার্ট কিনে স্ট্ক্রিন প্রিন্ট করিয়ে নিন। এতে খরচ কমই পড়বে। নিজের পছন্দসই কাস্টমাইজড টি-শার্ট পরার আনন্দ তো আছেই। আপনি যদি হন নান্দনিক এবং চিত্রকর, তাহলে আপনার প্রতিভা, নান্দনিকতার ধারণা এবং পছন্দ অনুযায়ী প্রিয় কবির গান, কবিতা কিংবা মুখচ্ছবি- সবই ইচ্ছামতো এঁকে নিতে পারেন। বাজারে এ কাজের জন্য পাওয়া যায় বিভিন্ন ফেব্রিক কালার। যদি নিজে আঁকতে না জানেন, কাস্টমাইজড করে নিতে পারেন বিভিন্ন অনলাইন পেজ থেকে। পেয়ে যাবেন ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে।
বিশ্বকবির কবিতা কিংবা গান, তা যেন প্রাণের গোপন কথাকেই তুলে ধরে আমাদের সামনে। তাই ফিউশন হোক বা পুরোনো গানে; টি-শার্ট হোক কিংবা বইয়ের পাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিচরণ- সর্বত্র বরণীয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় রোজকার ব্যবহার্য টি-শার্টের অংশ হয়ে তা পায় নতুন রূপ।