মানুষের সেবায় ব্রত হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করার মতো মহৎ পেশা-নার্সিং। এই পেশায় যেমন মানবসেবার সুযোগ রয়েছে,তেমনি সুযোগ রয়েছে ভালো ক্যারিয়ারেরও। বিদেশে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নার্সের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতেও বাংলাদেশের নার্সরা কাজ করছেন বেশ সুনামের সাথে। সম্ভাবনাময় এ পেশায় রয়েছে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও মর্যাদার জীবন। কিন্তু বর্তমানে দক্ষ নার্সদের বড় অভাব।তাই নার্স হিসাবে নিবন্ধন পাবার পর তুলনামূলকভাবে কম সময়ে চাকরি পাওয়া সম্ভব।
নার্সিং পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত যেকোনো নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং বা বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স পাস করতে হবে। আর ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা যেকোনো বিভাগ থেকে ন্যূনতম এসএসসি পাস লাগবে। অন্যদিকে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের জন্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জীববিদ্যাসহ এইচএসসি পাস হতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৬ পয়েন্ট থাকতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ-২.৫০-এর কম থাকা যাবে না। আর বর্তমানে এই ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কোর্সগুলো তিন বছরের ও বিএসসি কোর্সটি চার বছর মেয়াদি হয়ে থাকে।
খরচ
সরকারি নার্সিং কলেজগুলো থেকে বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স করতে চাইলে খরচ পড়বে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর বেসরকারি কলেজগুলোতে খরচ হবে চার বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। তবে বেসরকারি পর্যায়ের কলেজগুলোতে খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে কমবেশি হয়ে থাকে। আর সরকারি কলেজগুলোতে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং করতে কোর্স ফি লাগে না। প্রতি মাসে তাঁরা কিছু টাকা ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন।
পড়াশোনা
সেবা পরিদপ্তরের অধীনে নার্সিং কলেজ ও ইনিস্টিটিউটে নার্সিং নিয়ে বিভিন্ন কোর্স চালু রয়েছে। সারা দেশের সরকারি ৭টি ও বেসরকারি ২১টি নাসিং কলেজ ও সরকারি ৪৩টি নার্সিং ও বেসরকারি ৭০টি ইনিস্টিটিউটে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি এবং চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ইন নার্সিং কোর্সে পড়ানো হয়। নার্সিংয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কোর্সের শেষে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এতে উত্তীর্ণ হবার মাধ্যমে নিবন্ধিত হলেই পেশা হিসাবে নার্সিং নিতে পারবেন।
নার্সের আয়
ক্যারিয়ারের শুরুতে অ্যাসিস্ট্যান্ট নার্স বা ওটি সিস্টার হিসেবে সরকারি হাসপাতালে যোগ দিলে একজন নার্স সরকারি বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৳৮,০০০ – ৳১৬,৫৪০ মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। বেসরকারি ক্লিনিকে সাধারণত মাসিক ৳১৪,০০০ থেকে বেতন শুরু হয়। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে কমবেশি হতে পারে আয়।
নার্স থেকে পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়ার স্টাফ নার্স ও সুপারিন্টেনডেন্ট বা নার্সিং ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষক হওয়ার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত কারিগরি দক্ষতা। এছাড়াও সরকারের সেবা পরিদপ্তরের উচ্চ পদে যেতে পারেন নার্সরা। সেবাধর্মী এ পেশায় আপনিও অর্জন করতে পারেন সামাজিক মর্যাদা ও ভালো আয়ের সুযোগ।