আপনার বাচনভঙ্গি যদি সুন্দর হয় এবং টেলিভিশন চ্যানেল অথবা রেডিও স্টেশনগুলোয় তুলনামূলক সুবিধাজনক কাজ করতে চান, তা হলে সংবাদ উপস্থাপক বা নিউজ প্রেজেন্টার হতে পারে আপনার জন্য পছন্দের ক্যারিয়ার।
সাধারণ অর্থে উপস্থাপনা হলো বলা, পাঠ করা বা তথ্যের সুন্দর উপস্থাপন করা। ১৯৯৯ সালে দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যাত্রার পর থেকে সংবাদকে নিজে বুঝে অন্যকে বলার মাধ্যমে বোঝানোর কাজটি শুরু করেন সংবাদ পাঠক অথবা নিউজ প্রেজেন্টাররা। রাষ্ট্রের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার স্ক্রিন ও কণ্ঠ উচ্চারণই আধুনিক সংবাদ উপস্থাপনা।
কেন পেশা হিসেবে সংবাদ উপস্থাপনা? : যদিও এ পেশাটি খুবই প্রতিযোগিতামূলক, তবুও নিজেকে যোগ্য করে তোলার মাধ্যমে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে সুনাম কুড়ানো যায়। কেউ কেউ পার্টটাইম হিসেবে সংবাদ উপস্থাপন আবার কেউ ফুলটাইম কাজ করছেন।
কাজের সুযোগ : বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার ছাড়াও নিউজ প্রেজেন্টার বা অ্যাংকর হিসেবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে অনেক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশন আছে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৪৪ ও রেডিও ১০০টিরও কম। সব জায়গাতেই রয়েছে কাজের বিস্তর সুযোগ।
প্রস্তুতি : সংবাদ উপস্থাপনার জন্য শুদ্ধ উচ্চারণ জানতে ও বাচনভঙ্গি সুন্দর করতে হবে। শুদ্ধ উচ্চারণ রপ্ত করার পাশাপাশি টিভি চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপনা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করতে হবে। সংবাদ উপস্থাপনার জন্য উপস্থিত বুদ্ধি থাকা, সময় ও দিবস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, সাধারণ জ্ঞানে পারদর্শী হতে হবে। এ জন্য যেগুলো সংবাদপাঠ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (নিমকো), বেসরকারি পর্যায়ে বিইজেইএম, জবস এই ওয়ানসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত টেলিভিশন সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে আসছে। ইচ্ছা করলে সেখান থেকেও কোর্স করা যেতে পারে।
উপস্থাপনার কৌশল : প্রচুর বই পড়ে জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কথাবার্তা, আচার-আচরণ এমন হতে হবেÑ যাতে দর্শক বুঝতে পারে। প্রতি সেকেন্ডের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক হতে হবে। কোন শব্দটি জোর দিয়ে পড়তে হবে এবং কোনটিতে যতিচিহ্ন ব্যবহার কীভাবে করতে হবে, এ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে সংবাদ উপস্থাপন করতে হবে। শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের পাশাপাশি ইংরেজি শব্দের ওপর দক্ষতা থাকতে হবে।
ডেডিকেশন/প্যাশন- এই দুটো জিনিস যেকোনো কাজেই প্রয়োজন। সংবাদ উপস্থাপনাকে পেশা হিসেবে নেয়ার আগে ভাবুন আপনি সত্যিই এই কাজটি করতে চান কিনা। অর্থাৎ আপনি কতখানি ডেডিকেটেড এ কাজের প্রতি, তাহলেই আসুন এ মাধ্যমে...
ধৈর্য্য - অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংবাদ উপস্থাপনার কোর্স করেন। তারা মনে করেন, কোর্স করলেই বুঝি প্রেজেন্টার হওয়া যায়। তারপর বিভিন্ন টেলিভিশনে সিভি জমা দেন। সেখান থেকে ডাক না পেলে অধৈর্য্য হয়ে যান। আপনাকে মনে রাখতে হবে, সব সময় টেলিভিশনগুলো প্রেজেন্টার নিয়োগ দেয় না। যখন দরকার তখনই নেয়। আপনি সিভি দিতেই পারেন। তার আগে ভাবুন আপনি প্রেজেন্টার হওয়ার মতো কুয়ালিফাইড কি না! আপনি যে সিভিটা জমা দিয়েছেন সেটা কতটুকু গোছালো ছিলো! যে ছবিটা সিভিতে দিয়েছেন সেটা কেমন ছিলো! অবশ্যই আপনার সিভিটা গোছালো এবং পরিপাটি হতে হবে। কোন পোস্টের জন্য সিভি দিচ্ছেন সেটা কাভার লেটারে উল্লেখ করে দিতে হবে এবং সব তথ্য আপনার নিজের হতে হবে সিভিতে। এসব ঠিক থাকলে আপনাকে অবশ্যই চ্যানেল থেকে ডাকবে অডিশন বা পরীক্ষার জন্য। তবে কবে ডাকবে তার জন্য ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
স্মার্টনেস/আত্মবিশ্বাস - সংবাদ উপস্থাপনা রকেট সাইন্স নয়। কিন্তু একদম সহজও নয় এই বিষয়টি। এ মাধ্যমে কাজ করতে আপনার মাথা, কান, মুখ, ইমোশন এবং এক্সপ্রেশন সবকিছুর খেয়াল রাখতে হবে একই সময়ে, যেটা বেশ কঠিন। এই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আর আপনি যখন জেনে বুঝে কোনো কাজে নামবেন তখন আপনি অবশ্যই স্মার্ট।
সাধারণজ্ঞান- এটা আমাদের সবারই কম বেশী আছে। একেবারে কোনো জ্ঞান ছাড়া কোনো মানুষ নেই। কিন্তু একজন সংবাদ উপস্থাপক হলে আপনাকে সমসাময়িক সকল বিষয়ের উপর মিনিমাম দক্ষতা থাকতেই হবে। না জানা থাকলে, জেনে নিতে হবে। মানুষ পারেনা এমন কোনো কাজ নেই।
কণ্ঠস্বর: অবশ্যই কষ্ঠস্বর শ্রুতিমধুর হতে হবে। কারো ভারি আবার কারো পাতলা ভয়েস। এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। কিন্তু আপনি চাইলে কণ্ঠস্বরের প্রাকটিস করে আপনার কণ্ঠস্বর শ্রুতিমধুর করতে পারেন।