গল্পের প্রয়োজনে জুটি হয়ে অভিনয় করে যাচ্ছেন তারকারা। যার মধ্য থেকে কোনো কোনো জুটি দর্শকের হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। যাদের বারবার পর্দায় জুটি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন দর্শক। নির্মাতারাও তাই যুগ যুগ ধরে জুটি গড়ে নির্মাণ করে চলেছেন একের পর এক চলচ্চিত্র।
১৯৬১ সালে 'হারানো দিন' চলচ্চিত্রে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তারা। রহমান-শবনম জুটি বাংলা ও উর্দু দুই ভাষার সিনেমায় সমানতালে অভিনয় করে গেছেন। তাদের পরপরই জুটি গড়ে দর্শকের নজর কেড়েছিলেন আজিম-সুজাতা। সময়ের পালাবদলে দর্শক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে রাজ্জাক-কবরী জুটির নাম। ১৯৬৭ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় 'আবির্ভাব' ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে রাজ্জাক-কবরী জুটির। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ জুটিকে। 'রংবাজ', 'নীল আকাশের নিচে', 'পরিচয়, 'অধিকার', 'ময়নামতি', 'বেঈমান', 'ঢেউয়ের পর ঢেউ', 'অবাক পৃথিবী'সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে অনবদ্য অভিনয় দিয়ে এই জুটি তাদের কালকে জয় করে নিয়েছেন। চলচ্চিত্রবোদ্ধারা মনে করেন, এ পর্যন্ত যত জুটি পর্দায় দেখা গেছে, তাদের মধ্যে রাজ্জাক-কবরী জুটি সেরা। যদিও রাজ্জাক তার ক্যারিয়ারে একাধিক জুটি গড়ে সাফল্য পেয়েছেন। শাবানা ও ববিতার সঙ্গে অভিনীত তার ছবিগুলো জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। তারপরও অনেকের মতে, রাজ্জাক-কবরী জুটিই সেরা। স্বাধীনতার পর দেশীয় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক-কবরী জুটি ছাড়াও ফারুক-ববিতা, আলমগীর-শাবানা, সোহেল রানা-ববিতা, ওয়াসিম-অঞ্জু, ওয়াসিম-রোজিনা ও ববিতা-জাফর ইকবাল, জসিম-সুচরিতা, ইলিয়াস কাঞ্চন-চম্পা, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, মান্না-চম্পা থেকে শুরু করে সালমান শাহ-শাবনূর, ওমর সানী-মৌসুমী, মান্না-মৌসুমী, রিয়াজ-শাবনূর, রিয়াজ-পূর্ণিমা, শাকিব খান-অপু বিশ্বাস, শাকিব খান-বুবলী জুটির সিনেমা দর্শক দরুণভাবে গ্রহণ করেছেন।
নব্বই দশকের শুরুতে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছিল ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে গড়ে ওঠা অঞ্জু ঘোষ, চম্পা ও দিতির জুটি। এর মধ্যে ইলিয়াস কাঞ্চন-অঞ্জু ঘোষ অভিনীত 'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না' ছবিটি এখন পর্যন্ত দেশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টাকা আয় করা সিনেমা। অন্যদিকে, একই সময়ে তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আগমন ও জুটি গড়ে অভিনয়ের বিষয়টি ছিল চোখে পড়ার মতো। নব্বই দশকের আরেকটি আলোচিত জুটি নাঈম-শাবনাজ। 'চাঁদনী' থেকে শুরু করে 'জিদ', 'লাভ', 'চোখে চোখে', 'ফুল আর কাঁটা', 'অনুতপ্ত' 'বিষের বাঁশি', 'সোনিয়া', 'টাকার অহঙ্কার', 'ঘরে ঘরে যুদ্ধ'সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে তারা দর্শকের মনে জুটি হিসেবে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র থেকে এ জুটি বিদায় নেওয়ার পর দর্শকের কাছে জুটি হিসেবে জায়গা করে নেন সালমান শাহ-শাবনূর ও মৌসুমী-ওমর সানী। এই দুই জুটি নিয়ে নব্বই দশকের মাঝামাঝি নির্মাতাদের মাঝে একরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও চোখে পড়েছে। ওমর সানীর কথায়, তার ক্যারিয়ারে সেরা কাজগুলো ছিল মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করা ছবিগুলো। তবে মৌসুমী পরে মান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধেও দর্শকের মনোযোগ কাড়তে পেরেছেন। কিন্তু ওমর সানীকে অন্যদের বিপরীতে সেভাবে সফল হতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে, সালমান শাহ তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যত কাজ করেছেন, তার মধ্যে শাবনূরের সঙ্গে অভিনীত ছবিগুলো বেশি আলোড়ন তুলেছে। 'চাওয়া থেকে পাওয়া' 'সুজন সখী', 'বিক্ষোভ', 'স্বপ্নের ঠিকানা', 'স্বপ্নের পৃথিবী', 'স্বপ্নের নায়ক', 'আনন্দ অশ্রু', 'মহামিলন', 'বিচার হবে', 'তোমাকে চাই', 'জীবন সংসার', 'বুকের ভিতর আগুন'সহ আরও কিছু ছবিতে অভিনয় করে সালমান-শাবনূর জুটি দেশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন।