বলিউড তারকা রণবীর সিং কাজ করেছেন তামিল চলচ্চিত্র নির্মাতা শঙ্করের সঙ্গে আরেক তারকা বিক্রমের আন্নিয়ান সিনেমার রিমেক নির্মাণে। অন্যদিকে রাজমৌলি প্রযোজিত সিনেমায় প্রভাসের সঙ্গে অভিনয় করছেন অজয় দেবগন ও আলিয়া ভাট। এমনকি বলিউড কিং শাহরুখ খানের পরবর্তী সিনেমার পরিচালক তামিল নির্মাতা এটলি। এ ছবিতে তেলেগু তারকা নয়নতারা প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এদিকে শামান্থা আক্কিনেনিকে নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। তিনিও মনোজ বাজপেয়ির সঙ্গে ওটিটিতে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছেন। দেখা যাচ্ছে বলিউড ও দক্ষিণ তারকাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অন্যদিকে সালমান খানকে কেন তেলেগু সিনেমায় চিরঞ্জীবীর সঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন অনেকের। দেখা যাচ্ছে সিনেমার সংখ্যা, তারকাদের দাপটে দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রি বড় কিন্তু হেজিমোনির বিবেচনায় এখনো সামনে বলিউড।
চলতি সপ্তাহে এসব বিশ্লেষণ করে বলিউড (হিন্দি), টলিউড (তেলেগু) ও কলিউড (তামিল) ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোনটি বড় তা বিশ্লেষণ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। অভিনেতা ও পরিচালক যারা বলিউড ও দক্ষিণের সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। বলিউড, টলিউড ও কলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে লড়াইয়ে কেন বলিউড জয়ী হবে, সে বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। যদিও এখানে ভিন্ন মতও উঠে এসেছে।
থালাইভি, ৮৩-সহ দক্ষিণের অনেক আলোচিত সিনেমার নির্মাতা বিষ্ণু ইন্দুরি বলেন, হিন্দি সিনেমার তারকা ও দর্শকদের দিকে তাকালে বলিউডকেই বড় ধরা চলে। কারণ ভারতের অধিকাংশ মানুষের ভাষা হিন্দি। যদিও একই পদ্ধতি ও প্রযুক্তি দিয়েই দক্ষিণের সিনেমাগুলোও বানানো হয়। বলিউডের একটা বড় দর্শক ভিত্তি আছে। তাই দেশের অন্য ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বলিউডকে তুলনা করলে এটাকেই বড় বলা চলে।
ইকবাল ছবির পরিচালক নাগেশ কুকুনোর তেলেগু সিনেমা পরিচালনায় অভিষেক হতে যাচ্ছে গুড লাক সাখির মাধ্যমে। বলিউডকে বড় মনে করার কারণ সাধারণ বলেই ব্যাখ্যা করছেন তিনি। ‘হিন্দি আমাদের জাতীয় ভাষা এবং দেশের পাঁচটি বড় রাজ্যের ভাষাই হচ্ছে হিন্দি। তাই বলিউডের অনেক দর্শক আছে। পাঞ্জাব, বিহার, রাজস্তান, উত্তর ও দক্ষিণ প্রদেশে শুধুই হিন্দি সিনেমা দেখা হয়। এটা একটা অতি সাধারণ যুক্তি যে বলিউড বড়্। আরো বলা চলে তেলেগু ইন্ডাস্ট্রি অনেক সিনেমা প্রযোজনা করেছে। এদের অনেক সংগ্রহ আছে কিন্তু এ সিনামাগুলো হিন্দি ভাষায় ডাবিং বা ভাষান্তরিত নয় বলে শুধু তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশের মানুষ দেখেছে।’
চলচ্চিত্র সমালোচক ও বাণিজ্য বিশ্লেষক তরণ আদর্শ মনে করেন, দক্ষিণ ইন্ডাস্ট্রিকে উপেক্ষা করা কঠিন। তার কথায়, আমি মনে করি তেলেগু এখন বড় ইন্ডাস্ট্রি। তাদের যে ধরনের চলচ্চিত্র, বাজেট, পেশাদারিত্ব ও মুক্তির ধরন, সেগুলো চিত্তাকর্ষক। সর্বভারতীয় চলচ্চিত্রগুলোর পরিকল্পনা অত্যন্ত দুর্দান্ত। সম্ভবত বছরের পর বছর ধরে বলিউডের যে ইমেজ তৈরি হয়েছে, তাতেই একে বড় বলে মনে হয়।
অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন, যারা সব ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। এদের অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়, যারা এখনো কাজ করছেন এবং সবগুলোতেই সফল হয়েছেন। তাদের মধ্যে শ্রুতি হাসান একজন। অনেক আগের একটি সাক্ষাত্কারে তিনি ইটামসকে বলেছিলেন, আমি সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিই। তবে বলিউড সেটা করে না। মুম্বাইয়ের লোকজন বলিউডকে বড় বলে মনে করেন। সবাই না, অনেক অঞ্চলের মানুষ ও ফিল্মমেকার আছেন, যারা মনে করেন বলিউডই বড় ইন্ডাস্ট্রি। বাজারে অনেক হিন্দি ভাষায় রূপান্তরিত তামিল ও তেলেগু সিনেমা আছে, যেগুলো সম্পর্কে মানুষ সচেতন। দর্শকরা সেগুলোও দেখে।
বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডের মতে, ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বলা চলে। এটা অবশ্যই বলিউড, টলিউডসহ ভারতের অন্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো মিলে।
সর্বজনীনভাবে ভাষা একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বলিউড অভিনেত্রী অরুনা ইরানি, যিনি অনেক ভাষায় সিনেমায় কাজ করেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ ভারতীয়রা অনেকেই হিন্দি ভাষা বোঝেন কিন্তু হিন্দি ভাষাভাষী দর্শকদের জন্য দক্ষিণী ভাষা খুবই কঠিন।
এক দশক ধরে মণিকর্ণিকা—দ্য কুইন অব ঝাঁসি, কবির সিং ও গজনির মতো আরো অনেক সিনেমা দক্ষিণী ও বলিউড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সম্পর্ককে উপস্থাপন করে। তবে বলিউড ও আঞ্চলিক সিনেমাগুলোর সমন্বয় কিন্তু অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। কে বিশ্বনাথ, কে রাঘবেন্দ্র রাও, মণিরত্নম, রাম গোপাল বর্মা, প্রিয়দর্শনের মতো নির্মাতারা হিন্দি সিনেমাকে সেরা কিছু কাজ উপহার দিয়েছেন। অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, শাহরুখ খান, হূত্বিক রোশন যেমন বলিউডে আছেন, তেমনি রজনীকান্ত, চিরঞ্জীবী, কমল হাসান, বিজয়, অজিত, মোহনলাল, মামুত্তি এবং অন্যরা আছেন দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডস্ট্রিতে।