নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখা দিতে শুরু করেছে। একটু শহরতলির দিকে গেলে সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠের বুকে কাশের গুচ্ছ ঠিক চোখে পড়বে। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দেখা নিচ্ছে অন্য কিছু। এ তো দেবী দুর্গার আগমন বার্তা। আসছে পূজা আর পূজা মানেই তো নিজের সেরা রূপটা উজাড় করে দেওয়া চাই। আর ক'টা দিন বাদেই দুর্গাপূজা। চারদিকে সাজসাজ রব। এই ক'টা দিনই সুন্দর করে সেজে ওঠার পালা। করোনাকালে মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে পূজা দেখা কম হতে পারে কিন্তু সাজপোশাকে কি আর কমতি থাকতে পারে! তাই তো দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সেজে উঠেছে পূজার পোশাকের সম্ভার নিয়ে। বিশ্বরঙ প্রতিবছরই একটি থিম নিয়ে কাজ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুর্গা মায়ের মাথার ওপরে যে মুকুট রয়েছে, ওই মোটিভ নিয়ে এবার কাজ করেছে। দুর্গার দশ হাতের এক হাতে পদ্ম থাকে। সেটিও তুলে ধরা হয়েছে শাড়িতে। পাশাপাশি পাঞ্জাবি-শার্ট এবং বিভিন্ন পোশাকেও রাখা হয়েছে এই মোটিভ। এখন অনেকে বেশ পছন্দ করে ফ্যামিলি ড্রেস। অর্থাৎ ম্যাচিং করে পোশাক পরেন। এতে পারিবারিক বন্ধনও দৃঢ় হয়। পূজাতে সাদা-লালের প্রাধান্য সবসময় ছিল এবং থাকবে। এর বাইরেও কিছু রঙের চাহিদা থাকে। লালের পাশে বা সাদার সঙ্গে মেজেন্টা, কমলা, নীল, বেগুনি বা মেরুন পছন্দ করেন অনেকে। সকালবেলা ভক্তিমূলক অঞ্জলি দেওয়ার জন্য দুর্গার প্রতিমা সংবলিত শাড়ি রয়েছে এবারের কালেকশনে। রাতের অনুষ্ঠানের জন্য মসলিন, সিল্ক্ক, বলাকা সিল্ক্ক, দোপিয়ান এবং এন্ডি বেশি মানানসই হতে পারে।
নারীদের কাছে উৎসব মানেই শাড়ি। আর শারদীয় সাজে শাড়ির স্থান চিরন্তন। ১২ হাতের মায়াজাল কখনোই পুরোনো হওয়ার নয়। আধুনিক পোশাকের ভিড়েও শাড়ি সততই স্বতন্ত্র, অমলিন। উৎসবের আবহে সেই চিরন্তন শাড়িই এবার নবরূপে। ষষ্ঠীর সকাল। হালকা শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অনেকে। আবার রাতে পরতে পারেন কাতান সিল্ক্ক। একটু স্পেশাল লুক আনতে বা উৎসবের দিনগুলোতে নিজেকে একটু সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য পোশাকের গুরুত্ব অনেক বেশি। ষষ্ঠী, সপ্তমী বা নবমীতে টপস কিংবা সালোয়ার-কামিজ যাই পরুন না কেন, নারীদের কাছে দশমীর দিন একেবারেই আলাদা। এদিন শাড়ি না পরলেই যেন নয়। শাড়ির সঙ্গে বেশ মানানসই হতে পারে থ্রি কোয়ার্টার হাতা বা ঘটি হাতা। অনেকে আবার লম্বা হাতায় কুচি দিয়ে নানান ঢঙে ব্লাউজের সঙ্গে পছন্দের লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একটু খেয়াল করলে মাথায় গুঁজে দিন শিউলি কিংবা বেলি ফুলের মালা। এতেই খুব সহজে নিজেকে আলাদা করতে পারবেন। ইদানীং মেয়েদের ক্ষেত্রে চার দিনে আলাদা পোশাক নয়, বরং ভিন্ন লুকের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। তাই তো ষষ্ঠীতে বেছে নিতে পারেন আরামদায়ক সুতি শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ। অনেক কাজের ভেতরে পূজা-অর্চনাটাই আসল কাজ। তাই সকালে বা দুপুরে পরতে পারেন আরামদায়ক তাঁতের বা জামদানির সুতির শাড়ি। আরামও বজায় থাকল, ঐতিহ্যগত ভাবও ফুটে উঠল। এ সময় হালকা মেকআপ আর হালকা রঙের কোনো লিপস্টিক পরতে পারেন।
অষ্টমীর সকাল শুরু হয় অঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে। মণ্ডপে বা মন্দিরে গিয়ে এদিন দেবীকে ফুল দেওয়া হয়। দিনটি শিশুদের জন্য সবচেয়ে বিশেষ হয়ে থাকে। তাই ওদের সাজ পোশাকেও একটু রঙিন ভাব রাখতে পারেন। অষ্টমীর রাতে প্রায় সবাই ভারী সাজে সাজতে পছন্দ করেন। শাড়ি, গহনা, মেকআপ সব ক্ষেত্রেই চাই গর্জিয়াস লুক। তাই রাতের পোশাক হিসেবে কড়া রঙের জামদানি বা কাতান বেছে নিতে পারেন। কিশোরীরা পরতে পারেন আধুনিক সালোয়ার-কামিজ বা টপস। নবমীতে প্রধান আকর্ষণ সান্ধ্য পূজা, এদিন সন্ধ্যায় সবাই মন্দিরে যান। সন্ধ্যায় পূজা বলে সবাই একটু ভারী সাজে সাজেন। পোশাক হিসেবে নিতে পারেন শাড়ি বা কামিজ। একটু ভিন্ন ধরনের সাজ, মেকআপ বা গহনার সঙ্গে ফুলের মালা মাথায় দিতে পারেন। পোশাক যদি হয় জামদানি তাহলে একেবারেই অসাধারণ এক বৈচিত্র্যপূর্ণ সাজে সবার থেকে আলাদা আর নজরকাড়া হয়ে থাকবেন। দশমীর দিন ঘনিয়ে আসা মানেই নিজেকে গর্জিয়াসভাবে উপস্থাপন। এদিন জামদানি বা তাতের শাড়ি না পরলেও কাতান বা জর্জেট পরতে পারেন। কাকে কোন পোশাকে বেশি মানায় একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। শাড়ির সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি বেশ চল হয়েছে গাউনের। তবে গরমের এই সময় সেগুলো বাদ দেওয়াই ভালো। সবসময় খেয়াল রাখতে হবে নিজের আরামের বিষয়টি।
ছেলেদের পোশাকেও ফুটে উঠেছে উৎসবের রং। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তির সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট এবং টি-শার্ট। এসব পোশাক বেশ মানিয়ে যাবে ধুতি বা প্যান্টের সঙ্গে। পোশাকের ফেব্রিক হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে কটন এবং এন্ডি। এগুলো এই গরমে উত্তম পরিধেয় হতে পারে। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও রয়েছে অনেক কালেকশন। পূজায় লাল-সাদার বেশি প্রাধান্য থাকলেও শিশুদের পোশাকে রঙের কোনো বাধাধরা নেই। তাদের পোশাকে ফুটে উঠেছে হরেক রঙের বাহার। লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, মেজেন্টাসহ অনেক রঙের প্রাধান্য পেয়েছে পূজায় শিশুর পোশাকে। মেয়েদের জন্য রয়েছে ফ্রক, ফতুয়া, কুর্তি ও সালোয়ার-কামিজ। পাশাপাশি ছেলে শিশুটির জন্য রয়েছে শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি ও প্যান্ট।
কোথায় পাবেন
দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো এরই মধ্যে নিয়ে এসেছে পূজার নতুন কালেকশন। ছেলে, মেয়ে, শিশু বা বাড়ির বড়দের সবার জন্যই রয়েছে তাদের পোশাকের সম্ভার। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে দেশীদশ, স্বদেশি, বিশ্বরঙ, আড়ং, কিউরিয়াস, লারিভ, ক্লাব হাউস, ইয়োলো এবং সেইলরসহ অনেকেই নিয়ে এসেছে পূজার নতুন পোশাক। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ দেশের ছোট-বড় শপিংমল এবং মার্কেটে মিলবে পূজার আয়োজন।