তার নামেই যেন ভক্তদের ভালবাসা জড়িয়ে আছে। কারো কাছে তিনি ক্রিকেট ঈশ্বর, কারো কাছে লিটল মাস্টার। ব্যাট থেকে ভক্তদের জন্য উপহার দিয়েছেন সর্বোচ্চ রান, সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি, সবথেকে বেশিবার ম্যাচসেরার পুরষ্কার- আরও কতশত রেকর্ড। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কার কথা বলছি। না বুঝারই বা কী আছে, বলুন। তিনি যে, শচিন টেন্ডুলকার।
এই ক্রিকেট গ্রেটের আজ ৪৮তম জন্মদিন। ক্রিকেট দুনিয়ায় শচিন টেন্ডুলকার নামে পরিচিত হলেও আসল নাম শচিন রমেশ টেন্ডুলকার। ভারতীয় কিংবদন্তী শিল্পী শচিন দেব বর্মনের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখেন বাবা রমেশ টেন্ডুলকার। রমেশ ও রাজনি দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ শচিন। শৈশবে ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু ও চঞ্চল ছিলেন তিনি। দৈনিক কয়েক ঘন্টা বাস ভ্রমন করে মুম্বাইয়ের দাদার থেকে শিবাজী পার্কে ক্রিকেট শিখতে যেতেন শচিন। নেটে প্রথম দেখায় কোচ রামাকান্ত আচরেকারের নজর কাড়তে পারেননি। বড় ভাই অজিত টেন্ডুলকারের অনুরোধে দ্বিতীয় সুযোগ দেন কোচ রামাকান্ত। এবার ঠিকই দৃষ্টি কাড়লেন টেন্ডুলকার।
নেটে পুরো এক সেশন নট আউট থাকলে একটি করে কয়েন দিতেন কোচ আচরেকার। এমনি করে ১৩টি কয়েন জমা করেছেন টেন্ডুলকার। ১৪ বছর বয়সে স্কুল ক্রিকেটে বিনোদ কাম্বলির সাথে তার ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ হৈ চৈ ফেলে দেয় ভারত জুড়ে। ৩২৬ রানের ইনিংস খেলে আলোচনায় আসেন শচিন। সেবারই প্রথমবার পত্রিকার পাতায় নাম ওঠে লিটল জিনিয়াসের।
কৈশোরে পেস বোলার হওয়ার ঝোঁক ছিলো টেন্ডুলকারের। এজন্য মুম্বাইয়ের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে যোগ দেন। অজি গ্রেট ড্যানিস লিলির পরামর্শে বল ছেড়ে ব্যাট হাত মনযোগি হন শচিন। ১৯৮৮ সালে প্রথম শ্রেনীর ক্যারিয়ার শুরু শচিনের। গুজরাটের বিপক্ষে সে ম্যাচে মুম্বাইয়ের হয়ে ঠিক একশো রানে অপরাজিত ছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার।
৮৯ তে মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক টেন্ডুলকারের। সে ম্যাচতো বটেই পরের ম্যাচেও ডাক মারেন আউট শচিন। এরপর আর জাতীয় দলে জায়গা পাবেন না বলেও ধরে নিয়েছিলেন খোদ লিটল মাস্টার নিজেও। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৫১ সেঞ্চুরি মালিক শচিন। অথচ সেই তাকেই প্রথম শতকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৫ বছর।
টেস্টে সর্বাধিক ৪৯ শতক থাকলেও কোন ত্রিপল সেঞ্চুরি নেই শচিনের। সর্বোচ্চ ২৪৮ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিও এসেছিলো ঢাকার মাটিতে। প্রতিপক্ষ সেই বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৬ হাজার বা তার চেয়েও বেশি রান আছে কেবল ২৮ জনের। আর শুধু চার মেরেই ১৬ হাজারের বেশি রান করেছেন শচিন।
সর্বোচ্চ দুইশো টেস্ট ও ৪৬৩ ওয়ানডে খেলা শচিন ভারতের হয়ে খেলেছেন মাত্র একটি টি টোয়েন্টি। ছেলের তিন দশকের বেশি ক্রিকেট জীবন আর দুই যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র একবারই মাঠে বসে খেলা দেখেছেন মা রজনি টেন্ডুলকার। সেটাও বিদায়ী টেস্টে।
বাস্তবজীবনে ভোজন রসিক টেন্ডুলকার। পছন্দের খাবারের তালিকায় আছে পদ্মার ইলিশ। বাংলাদেশে সফরে এসে মোহাম্মদ আশরাফুলের বাসায় পেটুপুড়ে খেয়েও গেছেন ভারতীয় গ্রেট। নিজে আবার রান্না করার সুযোগটুকুও হারান না। শচিনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় ১১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। লিটন মাস্টারকে নিয়ে সিনেমার সংখ্যা দুইটি।