মা এবং বাচ্চার সুস্থতার জন্য উচ্চমানের সেবার নিমিত্তে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেটাই নিরাপদ মাতৃত্ব। এ ব্যবস্থা নেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য মাতৃ মৃত্যুহার কমানো এবং নবজাতকের মৃত্যু ও দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা রোধ করা।
বিশ্বে প্রতিদিন ৮৩০ জন মা মারা যান গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে। ৯৯% এ মৃত্যু ঘটে উন্নয়নশীল দেশে। প্রতি বছরের মতো এবারও (২৮ মে) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘করোনাকালে গর্ভকালীন সেবা নিন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধ করুন’ ।
১৯৮৭ সালে কেনিয়ায় নাইরোবি কনফারেন্স এ নিরাপদ মাতৃত্বের ঘোষণা করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ২০০০ সাল নাগাদ ৫০% মাতৃমৃত্যু কমানো। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে।
শ্রদ্ধাশীল নির্মল যত্ন, আস্থা, নিজের সুস্বাস্থ্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা এবং পরোয়োজনীয় উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা একটি দৃষ্টান্তমূলক অন্তর্ভুক্তি ।মিডওয়াইফারি নিয়োগ, এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের অন্তর্ভুক্তি আরও একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ বলে গণ্য করা হয়।
সেবা প্রদানের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
খুব কম নয়, খুব বিলম্বে নয়, খুব বেশি নয়, খুব তাড়াতাড়িও না। পদ্ধতিগুলো অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য । নিরাপদ মাতৃত্বের কার্যক্রম পরিচালনা করে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন যেমন WHO, UNFPA,UNICEF, IPPFF, WORLD BANK AND POPULATION CONTROL . ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে ৩৮%।
উন্নয়নশীল দেশের মাতৃমৃত্যুর হার অসহনীয়। নারীর অধিকারই মানবাধিকার। আমাদের দেশে প্রতি ১ লাখ ডেলিভারির মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৫ জন। ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়নে ১ লাখ ডেলিভারির মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০ জনে নিয়ে আসা।
নিরাপদ মাতৃত্বের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল
১. কমিউনিটিতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা
২. রেফারালের সুবিধা বাড়ানো
৩. যোগাযোগের উন্নতিকরণ
নিরাপদ মাতৃত্বের ৬টি পিলার
১. পরিবার পরিকল্পনা
২. গর্ভবস্থায় মায়ের সেবা
৩. প্রসবকালীন মা ও নবজাতকের সেবা
৪. প্রসবপরবর্তী সেবা
৫. গর্ভপাত পরবর্তী সেবা
৬. যৌনরোগ/এইচআইভি/এইডস নিয়ন্ত্রণ।
পরিবার পরিকল্পনা: প্রত্যেক দম্পতিকে প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য ও সেবা দিতে হবে। কখন সন্তান নিতে পারবেন, কয়জন সন্তান নিতে পারবেন এবং কতদিন পর নেবেন এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে এবং পদ্ধতি গুলো জানাতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সেবা: গর্ভাবস্থায় জটিলতা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্ণয় করতে হবে এবং যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। আয়রন বড়ি, ভিটামিন এবং টিকা দিতে হবে।
প্রসবকালীন ও নবজাতকের সেবা: প্রসবকালীন সময়ে দক্ষ চিকিৎসক/ মিডওয়াইফ দিয়ে ডেলিভারি করতে হবে এবং নির্মল ও নিরাপদ হতে হবে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মায়ের জন্য সেবার ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
প্রয়োজনীয় গর্ভকালীন ও নবজাতকের সেবা - এই পর্যায়ে ইমার্জেন্সি কেয়ারের সুব্যবস্থা থাকতে হবে দুই পর্যায়ে।
ব্যাসিক ইমার্জেন্সি কেয়ার: এ পর্যায়ে ভেলিভারি তে সহযোগিতা, এন্টিবায়োটিক, খিঁচুনির চিকিৎসা নবজাতকের সেবা প্রদান করা হয়।
কম্প্রিহেনসিভ ইমার্জেন্সি কেয়ার: এ পর্যায়ে সিজারিয়ানের সুবিধা, রক্ত সঞ্চালনের সুবিধা থাকতে হবে।
প্রসবপরবর্তী সেবা: শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর কাউন্সেলিং, পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতিগুলো জানাতে হবে এবং বাচ্চার বিপজ্জনক উপসর্গগুলো জানাতে হবে ।
গর্ভপাত পরবর্তী সেবা: গর্ভপাতের জটিলতা প্রতিরোধ করা প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিগুলো জানাতে হবে হসপিটাল থেকে ছুটি হওয়ার আগে।