যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস। ২০ এপ্রিল সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৩০ বছরের কম বয়সী এশীয় অঞ্চলের ৩০০ তরুণের তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস। তালিকায় এ বছর জায়গা করে নেয় বাংলাদেশের ৯ তরুণ। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, সামাজিক প্রভাব, খুচরা ও ই-বাণিজ্যে অবদান রাখায় তারা তালিকায় উঠে এসেছেন।
২০১১ সাল থেকে এই তালিকা প্রকাশ করছে ফোর্বস। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৯ জন বাংলাদেশি তরুণ তাদের অসামান্য কাজের জন্য এই তালিকায় যুক্ত।
শমী ও রিজভীর অ্যাওয়ারনেস ৩৬০
সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ৩০ জনের মধ্যে আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে 'অ্যাওয়ারনেস ৩৬০'-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা শমী চৌধুরী ও রিজভী আরেফিনকে। ১০ ক্যাটাগরির ১০ জন বিশেষ ফিচারডের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে যৌথভাবে আছে এই দু'জনের নাম। হাত ধোয়া, স্যানিটেশন সচেতনতা, স্বাস্থ্য ভালো রাখাসহ বস্তিতে থাকা যেসব মানুষের কাছে সাধারণত কেউ যেতে চায় না তাদের আচার, ব্যবহার, সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কাজ করছে শমী ও রিজভীর এনজিও প্রতিষ্ঠান অ্যাওয়ারনেস ৩৬০। জাতিসংঘের এসডিজি নিয়ে বিশ্বের ২৩টি দেশে কাজ করা ২৬ বছর বয়সী শমী।
জামির অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন
এই ক্যাটাগরিতে আরও আছেন ২৭ বছরের বাংলাদেশি আরেক স্বেচ্ছাসেবী তরুণ আহমেদ ইমতিয়াজ জামি। জামির প্রতিষ্ঠিত 'অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন' ২০২০ সাল থেকে কাজ শুরু করে পথশিশুদের নিয়ে। ছোট্ট সেই সংগঠন অল্প সময়ের ব্যবধানে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। ফোর্বসে জায়গা করে দিয়েছে সে প্রমাণও। অভিযাত্রিকের তৈরি হয়েছে হাজারো সফলতার গল্প। সে তালিকায় যুক্ত এবার ফোর্বসের স্বীকৃতি। খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে স্বাবলম্বী করে তোলাসহ লাশ দাফন নিয়ে বর্তমানে কাজ করছে এই সংগঠন।
হাইড্রোকো প্লাসের হূদিতা ও জাহিন
২৮ বছরের রিজভানা হূদিতা ও ২২ বছরের মো. জাহিন রোহান রাজীনের গল্প তো জানানোই হয়নি। হূদিতা ও জাহিনের লড়াই তাদের প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসকে ঘিরে। ঢাকাভিত্তিক হাইড্রোকো প্লাস নিরাপদ পানি নিয়ে নিজেদের কাজ পরিচালনা করে আসছে ২০১৮ সাল থেকে। পানির গুণগত মান নিয়ে তাদের তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ নানান সংস্থা। ফোর্বসের এই স্বীকৃতি যেন ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে তাদের এই
মোতাসিম ও শেহজাদের গেজ টেকনোলজিস
২০২০ সালে জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে জাতিসংঘের ১৭ জন তরুণ নেতার তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশি তরুণ প্রযুক্তিবিদ শেহজাদ। ফোর্বসের প্রযুক্তি বিভাগে বাংলার হয়ে তাক লাগিয়েছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক উদ্যোগ 'গেজ টেকনোলজিস'-এর প্রতিষ্ঠাতা শেহজাদ নূর তাওস প্রিয় ও মোতাসিম বীর রহমান। অনলাইন লেনদেনের জন্য ভিজ্যুয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি সরবরাহ করে চমক দেখিয়েছে সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশভিত্তিক এই এআই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান।
সাকিবের স্টার্টআপ ক্র্যামস্ট্যাক
এখানেই শেষ নয়, প্রযুক্তি বিভাগে বাংলাদেশের হয়ে আলো ছড়ানোর তালিকায় আছেন মীর সাকিবও। সাকিবের স্টার্টআপ ক্র্যামস্ট্যাক একটি বিজনেস ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম। যার মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য খোঁজা, বিশ্নেষণ ও ব্যবহার হয়ে থাকে। ডিজিটাল যুগে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই নানা ডেটা নিয়ে কাজ করছে। বলা হয়, ডিজিটাল যুগের জ্বালানি 'ডেটা'। এই ডেটা নিয়েই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নাম লিখিয়েছেন ক্র্যামস্ট্যাক। ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ডসের 'বিগ ডেটা অ্যানালিটিকস' বিভাগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ক্র্যামস্ট্যাক। ডেটা বিশ্নেষণে এবার সে তালিকায় যুক্ত হলো ফোর্বসের নামও।
মোরিন তালুকদারের পিকাবো
রিটেইল অ্যান্ড ই-কমার্স ক্যাটাগরিতে স্থান করে নেওয়া মোরিন তালুকদার পিকাবোর সহ-প্রতিষ্ঠিতা। এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু ২০১৬ সাল থেকে। মূলত পিকাবু অনলাইন প্রতিষ্ঠান হলেও চলতি বছরের মধ্যে দেশব্যাপী দুই শতাধিক দোকান গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এই প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন পণ্য বিক্রি ও দ্রুত ডেলিভারি দিয়ে আলোচনায় আসে এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম।