নদী, ঝরনা, বন্যপ্রাণী, প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্যময় সম্পদে সমৃদ্ধময় এক স্থান মিরসরাই।সেখানকার গিরি-নদীর মিলনস্থলে ছায়া হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে নীলাকাশ। এ যেন কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রঙে আঁকা ছবি। এর খুব কাছেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প মুহুরী প্রজেক্ট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে মুহুরী সেচ প্রকল্প।
যারা চট্টগ্রামের নেভালে গিয়েছেন মুহুরী প্রকল্পের প্রবেশদ্বার অনেকটা চট্টগ্রামের নেভালের মতো দেখতে। এখানে এলে আপনি দেখতে পাবেন উইন্ড মিল, যা দেশে প্রথম নির্মিত। এই প্রকল্পের আওতাধীন যে বাঁধটি আছে তা ফেনী নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে।
বাঁধের একপাশে দেখতে পাবেন ভরা নদী আর অন্য পাশে শুকনো নদী। নৌকা করে নদীতে ঘুরে বেড়াতেও পারবেন। শীতে মুহুরী প্রকল্পের অন্যতম আকর্ষণ সাইবেরিয়ার অতিথি পাখি। বাঁধের উত্তরে আছে নীল জলরাশি আর দক্ষিণে দিগন্ত বিস্তৃত চর।
এ ছাড়াও পাইন গাছের সারি, ঝাউ বন, কাশফুলের দেখা সবই পাবেন সেখানে। সেখানকার সৌন্দর্য ও পরিবেশ যেকোনো পর্যটককেই আকর্ষণ করবে। দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ৪০ দরজা বিশিষ্ট সারিবদ্ধ রেগুলেটর।
এ ছাড়াও বেড়িবাঁধ দিয়ে সোজা দক্ষিণে গেলেই দেখা যাবে উপকূলীয় বনবিভাগ কর্তৃক সৃজন করা কৃত্রিম সুন্দরবন। এখানে বনের ফাঁকে ফাঁকে সর্পিল আকারে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী। কৃত্রিম সুন্দরবনে আছে হরিণ, বানরসহ অনেক বন্য পশুপাখির মূর্তি।
যদিও মুহুরী প্রজেক্টের বিনোদন ও পিকনিক স্পটে পর্যটকদের জন্যে উন্নত সহজ কোনো খাবারের হোটেল বা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা নেই। তবে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট পশ্চিমের বনে নিজ দায়িত্বেই খাবারের আয়োজন ও রান্না বান্না করে থাকে। দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে দুই একটি অস্থায়ী ভাসমান চা দোকান বসে।
মুহুরী সেচ প্রকল্প ঘিরে গত আড়াই দশকে গড়ে ওঠে বিনোদন ও পিকনিক স্পট। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণ পিপাসু লোক এবং পর্যটক বেড়াতে আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকের মনোরোম পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেন পর্যটকরা।
সেখানে গেলে দেখতে পাবেন- কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নিচে খেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরী জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে ফেনী যেতে হবে। এরপর ফেনী লালপোল থেকে বাসে করে সোনাগাজী উপজেলা সদরে যাবেন। এরপর সেখান থেকে সিএনজি ভাড়া করে মুহুরী প্রজেক্ট যেতে পারবেন। কিংবা সোনাগাজী উপজেলা সদর থেকে বাসে বাদামতলী এসে রিকশা ভাড়া করে মুহুরী প্রজেক্ট পৌঁছাতে পারবেন।
মুহুরী প্রজেক্টের কাছেই আছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাক বাংলো। এ মুহুরি প্রজেক্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের সোনাগাজীতে অবস্থিত জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতেও রাত কাটাতে পারবেন। ফেনী শহরেও বেশকিছু ভালো মানের হোটেল আছে।