আমাদের দেশে গরমকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এই বাঙ্গি। আর দেশিয় ফল বলে খুব অল্প দামে সাধ্যের মধ্যেই মেলে।
বাঙ্গির পক্ষে বিপক্ষে নানা ট্রোল, বিতর্ক কিংবা আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও, হাল্কা হলুদ রঙের মিষ্টি গন্ধযুক্ত এই ফলটির উপকারিতার রয়েছে বিশাল ফর্দ। নানা বাক-বিতন্ডা কিংবা হাস্যরসের মাঝে অনেকের কাছে অজানাই রয়ে যাচ্ছে বাঙ্গির উপকারিতার এই দিক।
বাঙ্গির পুষ্টিগুণ
বাঙ্গির মোট ওজনের ৯০ শতাংশই হল পানি। তবে পানি ছাড়াও ভিটামিন ও মিনারেলস-এ ভরপুর বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-'এ', 'সি', 'বি৬', ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও খাদ্যআঁশ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গি থেকে ৩৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া গেলেও এতে ভিটামিন এ-এর পরিমাণ ৬৭%, ভিটামিন সি ৬১%, ভিটামিন বি৬ ৫%, পটাশিয়াম ৭%, ম্যাগনেশিয়াম ৩% ও টোটাল ৩% ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্যআঁশ রয়েছে।
দেহের রোগ প্রতিরোধে কিংবা কোষীয় ক্ষত সরাতে বাঙ্গির জুড়ি নেই। বাঙ্গিতে উপস্থিত gallic acid, ellagie acid ও caffeic acid এর মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষীয় তথা দৈহিক ক্ষত দ্রুত সারাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
বাঙ্গিতে লো ক্যালরি, কোলেস্টেরল ও চর্বির পরিমান একদম শূন্য হওয়ায়, ফ্যাট ফ্রি বা লো ক্যালরি ডায়েটের ক্ষেত্রে এটি একটি আদর্শ খাদ্য। আবার এতে রয়েছে হাই ফাইবার ও ওয়াটার। সুতরাং যারা সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে চান, তাদের জন্য বাঙ্গি হতে পারে চমৎকার একটি খাদ্য।
৩ হাজার ছয়শ আটাশ জন মানুষের উপর করা মোট ১৩ টি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ মাত্রার পানি ও কম শক্তি আছে এমন খাবার দ্রুত ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। তাই যারা ওজন কমাতে চান , তাদের জন্যও বাঙ্গি হতে পারে আদর্শ পছন্দ।
বাঙ্গি আলসার, অ্যাসিডিটি ও ক্ষুধামন্দাসহ হজম প্রক্রিয়ার আরও অনেক সমস্যার সমাধান করে থাকে।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যআঁশ যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে বাঙ্গির ভূমিকা অবর্ণনীয়।বাঙ্গিতে রয়েছে এমন এক ধরনের কোলাজেন প্রোটিন যা ত্বককে সতেজ ও টান টান করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ ও কুচকে যাওয়া প্রতিরোধ হয়।তাছাড়াও বাঙ্গিতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন 'সি' থাকার কারণে ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং একটি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার জন্য হলেও আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় বাঙ্গি যোগ করতে পারেন।
প্রথম কথা হল বাঙ্গিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের যেকোনো ধরনের জার্ম বা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বককে সজীব রাখতে সাহায্য করে। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি, বিটা-ক্যারোটিন ও আরও কিছু উপকারি উপাদান সম্মিলিতভাবে ব্রণ বা একজিমার সমস্যাকে প্রতিহত করে। বাঙ্গি ছোট ছোট টুকরো করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পাতলা কাপড়ের সাহায্যে ছেকে রসটুকু নিয়ে লোশনের মত নিয়মিত ব্যাবহারে ব্রণ বা একজিমার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
বাঙ্গিতে উপস্থিত 'এ' ও 'বি' ভিটামিন চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় ও নতুন চুল গজাতে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে ভিটামিন 'এ' মাথার ত্বক থেকে সিবাম (sebum) উৎপাদন বৃদ্ধি করে যা আমাদের চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মশ্চারাইজড রাখে। অন্যদিকে ভিটামিন 'বি' নতুন চুল গজাতে ও চুল পড়া প্রতিরোধ করে।
বাঙ্গিতে ফলিক এসিডের উপস্তিতি থাকায় রক্ত তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাই গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি একটি উপকারী ফল। তাছাড়াও শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমানন সোডিয়াম নিষ্কাশনের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের হাতে-পায়ে কিংবা শরীরে পানি আসা প্রতিহত করে।
বাঙ্গিতে চিনি, চর্বি ও ক্যালরি কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যে আদর্শ একটি খাদ্য তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণেও বাঙ্গি ভূমিকা রাখে। বাঙ্গিতে রয়েছে এন্টিকোয়াগুলেন্ট বা ব্লাড থিনিং প্রোপার্টি যা রক্তকে পাতলা রাখতে ভূমিকা রাখে। ফলে আর্টারিতে রক্তের স্বাভাবিক ফ্লো বজায় থাকে এবং ব্লাড ভেসেলে অতিরিক্ত কোন চাপের সৃষ্টি হয় না।যার কারণে হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ কম পড়ে এবং একে সুস্থ রাখে।
বাঙ্গিতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে যা ভাসোডাইলেটর (vasodilator) হিসাবে কাজ করার মাধ্যমে রক্তের স্বাভাবিক ফ্লো বজায় রাখে। ফলে রক্তনালীগুলো খুব রিলাক্সিং থাকে এবং স্বাস্থ্যবান একটি ব্লাড প্রেসার বজায় থাকে।
পটাশিয়ামসমৃদ্ধ বাঙ্গি 'stress relieving' ফুড হিসেবে বিবেচিত যা হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সাপ্লাই বৃদ্ধি করে। ফলে বাঙ্গি আপনাকে যেকোনো কাজে আরও বেশি মনযোগী ও স্বচ্ছন্দ করে তুলতে সাহায্য করে।
বাঙ্গির এক ধরনের নির্যাস যাকে বলা হয় oxykine। এই oxykine নামক উপাদান কিডনির পাথর অপসারণ ও অন্যান্য কিডনি ডিসঅর্ডারে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকার কারণে কিডনির সুস্থতায় বাঙ্গির ভূমিকা রয়েছে।
নিয়মিত বাঙ্গি খেলে দেহে ভিটামিন-'এ' এর ঘাটতি পূরণ হয় যা ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। বিশেষ করে ধূমপায়ী, ধুমপানের কারণে যাদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য বাঙ্গি বিশেষ উপযোগী একটি খাদ্য।