পেটভরপুর খেয়েছেন কিংবা ভাজাপোড়া বেশি খাওয়ায় হজমে সমস্যা অনুভব করছেন। স্বস্তি পাচ্ছেন না, এক গ্লাস বোরহানিতে মিলতে পারে প্রশান্তি। হজমের জন্য বোরহানি অনেক উপকারী।
বোরহানির প্রধান উপকরণ টক দই। এতে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া আছে, যা খাবার হজম করে পেট ঠান্ডা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে উপকারী বোরহানির ইতিহাস খুঁজে পাওয়াটা কেবল দুঃসাধ্য নয়, অসম্ভবও বটে!
বৈদিক সময়ে অতিথিকে মধুপর্ক দিয়ে স্বাগত জানানো হতো। এটি ছিল ঘি, দই, দুধ, মধু আর চিনি দিয়ে তৈরি পানীয়। রাজা তৃতীয় সোমেশ্বরের ১১২৭ সালে লেখা মানসোল্লাসেও পাওয়া যায় তরল দইকে হালকা ঝাল বা ঝাঁজালো স্বাদের করার জন্য রাই সরিষা ব্যবহার করতেন ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমের অভিজাতেরা। সময়কালটা মাথায় রাখা প্রয়োজন এখানে। কারণ, এ সময়ে ধীরে ধীরে পারস্য-তুর্কি মুসলিম ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছে পশ্চিমঘাট আর দাক্ষিণাত্যে। আরব ব্যবসায়ীরা তো সপ্তম শতাব্দী থেকেই সেখানে ঘাঁটি গেড়েছিলেন।
ভারতে তরল দইয়ের ব্যবহারে পরিবর্তন আসে পারসিক-তুর্কি প্রভাবে, দশম শতাব্দীর শেষ পর্যায়ে যার শুরু। আইরান আর দুঘ নামের পানীয় তারা সঙ্গে করেই এনেছিল। আইরান হলো দই, লবণ ও পানির মিশ্রণ আর এর সঙ্গে পুদিনাপাতা যোগ করলেই সেটা হয়ে যায় দুঘ। ভারতে, বিশেষত উত্তর প্রদেশে প্রাচীনকাল থেকেই পুদিনা হতো বলে প্রমাণ মেলে। তাই মুহম্মদ ঘুরির দিল্লিতে আসা পারসিক-তুর্কিদের দুঘ খেতে খুব বেশি একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি। আর এই দুঘ থেকেই যে বোরহানির মূল সূত্র খুঁজে নেওয়া যাবে, সে ব্যাপারে খুব বেশি সন্দেহ নেই। দুঘের উপাদান মূলত দই, পানি, লবণ আর পুদিনা। খুব সম্ভবত দিল্লিতে এসে এর খানিক পরিবর্তন হয়েছিল, আর এই বাংলায় তার চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল এখানকার বিভিন্ন ধরনের মসলার সঙ্গে মিশে, স্থানীয় খাদ্যরীতির মিথস্ক্রিয়ায়। বোরহানির ক্ল্যাসিক যে রেসিপি দিয়েছেন সিদ্দিকা কবীর ১৯৭৮ সালে, তাতে দেখা যাচ্ছে দই, পানি, লবণ আর পুদিনা ছাড়াও জিরা, ধনিয়া, আদা, মরিচ, গোলমরিচ, সরিষা আর চিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এখন তো রীতিমতো ঢুকে পড়তে চায় টমেটো সসও।
ঢাকা শহরে সেরা বোরহানি মেলে কোথায়? বাণিজ্যিকভাবে বোতলে পুরে যা বিক্রি হয়, সেটা মুখে তোলার মতো হয় না। তাই বিয়েবাড়ি ছাড়া ভালো বোরহানি পাওয়া কঠিন। তবে যে একবার ঢাকার সেনাকুঞ্জের বোরহানি মুখে দিয়েছে, তার কাছে অন্য জায়গার এই পানীয় ভালো লাগার কথা নয়। বহুবার জিজ্ঞাসা করেও বাবুর্চির কাছ থেকে এর রহস্য বের করা যায়নি।