বর্ষায় বাংলাদেশ পর্যটকদের জন্য অনেকভাবে বেশি বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে। বর্ষার হিজল, তমাল, কদম, কামিনী আর যূথিকার ফুলের গন্ধে পর্যটকদের মন আবেগি হয়ে ওঠে। মনে হয় প্রেমের দোলা দিয়ে যায় পর্যটকদের হৃদয়ে। যারা এই বর্ষায় ঘুরতে চান তাদের জন্য কয়েকটি উপযুক্ত জায়গার সন্ধান দেয়া হল। আজ দ্বিতীয় পর্ব-
বেলাই বিল, গাজীপুর
রূপ-সৌন্দর্যে প্রতিটি মৌসুমেই অনন্য বেলাই বিল। তবে ভরা বর্ষায় এটি ঘুরে পর্যটকদের মুগ্ধতার মাত্রা হয়ে যায় টইটম্বুর। গাজীপুরের বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রামঘেরা বেলাই বিল। বর্ষা মৌসুমে ছেলেরা বিলের চারপাশে ডাঙ্গি খনন করে। এখানে ধরা হয় মাছ। সবমিলিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের দারুন ভাবে আকর্ষণ করে বেলাই বিল । ভরা বর্ষায় বেলাই বিলে অনাবিল আনন্দের ছোঁয়া পেতে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে চলে যান গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে রিকশা বা টেম্পোতে কানাইয়া ঘাট।
নেত্রকোনার হাওর
বর্ষায় হাওর ঘুরবেন না, তা হয় নাকি! হাওর দেখতে যেতে পারেন নেত্রকোনায়। জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুড়ি ও কলমাকান্দা উপজেলা জুড়ে কমবেশি ৫৬টি হাওর ও বিল আছে। শুকনা মৌসুমে হাওরে চাষাবাদ হলেও বর্ষায় পানিতে পরিপূর্ণ থাকে এসব হাওর-বিল। তখন এসব এলাকার একমাত্র বাহন হয় নৌকা। বর্ষাকালে হাওরের গ্রামগুলি একেকটি ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। এছাড়াও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে বর্ষা মৌসুমে লঞ্চে চড়ে যাওয়া যায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে।
রাতারগুল, সিলেট
রাতারগুল দেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন। রাতারগুলের মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে যেতে হবে বর্ষায়। এই বনে আছে নানান প্রজাতির পাখি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়ি ইত্যাদি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে— বানর, উদবিড়াল, কাঠবেড়ালি, মেছোবাঘ ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির গুঁইসাপ ও নানান ধরনের সাপের অভায়শ্রম এই বন।
টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
প্রকৃতির নির্মল রসায়নের এক অপরূপ আনন্দধারার দেখা পাবেন যদি এই বর্ষায় আপনি হাওর ভ্রমণে যান। কখনো খানিক রোদ, আবার মুষলধারায় বর্ষণ— এ যেন চলতে থাকে কাব্যিক ছন্দে। আর বর্ষার এই অনবদ্য রূপ দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জে। টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকৃতির অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ। এ হাওর শুধু একটি জলমহাল বা মাছ প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও আহরণেরই স্থান নয়, এটি মাদার ফিশারীও বটে। হিজল করচের দৃষ্টি নন্দন সারি এ হাওরকে করেছে মোহনীয়।
নীলাচল, বান্দরবান
যারা পাহাড় ভালোবাসেন এই বর্ষায় তারা ঘুরে আসতে পারেন নীলাচল থেকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬শ’ ফুট উঁচু এ পর্যটন কেন্দ্র। বর্ষায় এ জায়গা থেকে মেঘ ছোঁয়া যায়। এ পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের থাকার জন্য রিসোর্টও আছে। বান্দরবান শহর ছেড়ে চট্টগ্রামের পথে প্রায় তিন কিলোমিটার চলার পরেই হাতের বাঁ দিকে ছোট একটি সড়ক এঁকেবেঁকে চলে গেছে নীলাচলে।