কভিভ-১৯ শুরুর পর ঘরবন্দি হয়ে পড়া মানুষের জীবনযাপনে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি দারুণ ভূমিকা রেখেছে। এ সময়ে প্রাত্যহিক যোগাযোগ, অফিস, মিটিং, বিনোদনের মতো কর্মযজ্ঞে প্রযুক্তিনির্ভরতা বেড়েছে। আর এ কারণে গত বছরের শুরু থেকে ফুলেফেঁপে উঠেছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর গ্রাহক ও ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমানতালে বেড়েছে আয়। বর্ধিত কলেবরে গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, অ্যাপলের মতো কোম্পানি নতুন কর্মী নিয়োগ করেছে। বিজনেস ইনসাইডার এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রেই অন্তত ৮০ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন মাস) গুগলই চার হাজার কর্মী নিয়েছে। গত জুন মাসে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো অন্তত তিন লাখ কর্মী নিয়োগে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এসব চাকরির মধ্যে সফটওয়্যার ও অ্যাপ ডেভেলপার, আইটি সাপোর্ট স্পেশালিস্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেকচারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে। এইচওয়ান বি ভিসার আওতায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে কোম্পানিগুলো বেতন হিসেবে কেমন খরচ করছে, সেটা সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। বিজনেস ইনসাইডার ২৫০টি কোম্পানির আড়াই হাজার কর্মীর বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করেছে। চাকরির জন্য অন্যতম সেরা গন্তব্য গুগল। তো গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কেমন? গুগলের বিশ্বের ৫০টি দেশে ৭০টিরও বেশি অফিস রয়েছে। কোন দেশে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, ওই দেশের জীবনযাত্রা ও আনুষঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা করে বেতন কাঠামো ঠিক করে গুগল। এ জন্য একই দক্ষতা সম্পন্ন হলেও তাইওয়ানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীর বেতন বেশি। বিভিন্ন দেশে গুগলে কর্মরত সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে কয়েকটি ক্যাটাগরি। একদম নতুন তথা ফ্রেশারদের জন্য এন্ট্রি লেভেল (এল ৩)। এন্ট্রি লেভেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা গুগলে ঢুকে দেশভেদে বেতনের সঙ্গে বোনাস এবং কমপেনসেশন মিলিয়ে মাসে গড়ে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এ বেতন ১০ লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এসব প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি কাজের পরিবেশও কর্মীবান্ধব। অফিসে বসে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন; চাইলে সুইমিংপুলে সাঁতার কেটে আসতে পারেন, চাইলে গেমস খেলতে পারেন। খেতে ইচ্ছে হলে অফিসেই রয়েছে বুফের আয়োজন। চাকরিতে এমন সুবিধা মেলে গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন ফেসবুক কিংবা মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে।
টেক জায়ান্টে চাকরির যোগ্যতা
অনেকের ধারণা, টেক জায়ান্টে যারা চাকরি করেন সবাই কোডার বা প্রোগ্রামার। এই ধারণা ভুল। প্রোগ্রামিংয়ের পাশাপাশি ডিজাইনার, সাপোর্ট, কল সেন্টার, মার্কেটিং, কপিরাইটারসহ বিভিন্ন রকমের কাজ রয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ফেসবুকের মার্কেটিংয়ে টিমে কাজ করছেন। যারা প্রোগ্রামার নয়। গুগল, ফেসবুক, অ্যাপলের মতো জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে চাকরি করতে হলে সবার প্রথমে যে যোগ্যতা থাকতে হবে তা হলো, দক্ষতা। আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করবেন সেই কাজটিতে দক্ষ হতে হবে। স্কিলের পাশাপাশি মানসিক দক্ষতা, টিম বিল্ড, নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে দ্রুত শেখার আগ্রহ ইত্যাদি গুণ থাকতে হবে। পরীক্ষায় আপনার সিপিজিএ কত সেটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এক সাক্ষাৎকারে গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাজলো বক জানিয়েছিলেন, গুগল কর্মীদের ডিগ্রি থেকে স্কিলের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। গুগলের ১৪ শতাংশ কর্মীর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি নেই। তবে ভালো রেজাল্ট বা ডিগ্রির যে গুরুত্ব নেই তা নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্যই চাকরি পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখবে। গুগলের মতোই অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজনের মানবসম্পদ বিভাগ এমনভাবেই চিন্তা করে এবং নিয়োগ দিয়ে থাকে। সাধারণত টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে প্রোগ্রামার বা টেকনিক্যাল স্কিল রয়েছে, এমন কর্মীদের চাকরির সুযোগ বেশি। কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে হলে কোডিং, গণিত, কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়ে দ্রুত যে কোনো সমস্যা সমাধানের দক্ষতা জরুরি।
টেক জায়ান্টে বাংলাদেশ
বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশের তরুণদের কাজের সুযোগ বাড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই যোগ দিচ্ছে গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন, ফেসবুক কিংবা মাইক্রোসফটের মতো শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিতে। তবে প্রতি বছর কতসংখ্যক শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মইনুল ইসলাম জাবের সমকালকে জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স রিলেটেড বিষয়ে পড়াশোনা করা প্রায় সব শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে চাকরি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। শীর্ষ টেক জায়ান্ট তো রয়েছেই, পাশাপাশি এমন প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো এ ক্ষেত্রে ভালো করছে কিন্তু আমাদের দেশে কোম্পানিটি হয়তো এতটা পরিচিত নয়, এসব প্রতিষ্ঠানেও অনেকে যোগ দিচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে গিয়ে সেখানে হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিচ্ছে। ফলে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করা দক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের শীর্ষ আইটি কোম্পানিতে কাজের ভালো সুযোগ রয়েছে। তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে জানান, তিনিসহ তার ব্যাচের মাত্র দু'জন দেশে রয়েছেন, বাকিরা বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। দেশে যারা থাকছেন তারাও খুব ভালো অবস্থানে আছেন।
টেক জায়ান্টে চাকরির খোঁজখবর
টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর নিয়োগ সংক্রান্ত খবর তাদের ওয়েবসাইটেই রয়েছে। গুগলে চাকরির খবর জানা যাবে www.careers.google.com ঠিকানায়, মাইক্রোসফটের www.careers.microsoft.com, অ্যাপলের www.apple.com/
careers, অ্যামাজনের https://hiring.amazon.com এবং ফেসবুকের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য মিলবে www.facebook.com/careers/jobs ঠিকানায়।