মৌসুমের শেষ ম্যাচে বড় দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভারভাবে খেলে নামে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। লিগের দ্বিতীয় স্থান নির্ধারিত হয়ে যায় আগেই। তাই তো ওলে গানার সোলশায়ারের সব মনোযোগ দিয়েছিলেন ২৬ তারিখ ইউরোপা লিগের ফাইনালের দিকে। নিয়মিত একাদশের ৮ খেলোয়াড়কে তাই তো এদিন বিশ্রামে রেখেছিলেন তিনি। উলভসের মাঠ থেকে ২-১ গোলের জয় নিয়ে গোটা মৌসুম জুড়ে প্রতিপক্ষের মাঠে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটাই প্রিমিয়ার লিগ থেকে এবারে সোলশায়ারের দলের একমাত্র প্রাপ্তি। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে মাত্র চারবার। ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগের দেড়শ বছরের ইতিহাসে মাত্র ছয়। আর অ্যাওয়ে ম্যাচে টানা অপরাজিত থাকার ২৭ ম্যাচে অপরাজিত রেকর্ড থেকে মাত্র এক ম্যাচ পিছিয়ে থেকেই ২০২০/২১ মৌসুমের ইতি টেনেছে রেড ডেভিলসরা।
এদিকে মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত দল নিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারে নামেন পেপ গার্দিওলা। ক্লাব রেকর্ড পরিমাণ অর্থ দিয়ে বেনফিকা থেকে রুবেন দিয়াজকে উড়িয়ে আনেন গার্দিওলা। যার মর্যাদাও রেখেছেন দিয়াজ। নিজের প্রথম মৌসুমেই ক্রীড়া লেখকদের ভোটে প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন এই পর্তুগিজ ডিফেন্ডার। তিন ম্যাচ হাতে রেখে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাও নিশ্চিত করেছে সিটিজেনরা। ওয়েস্ট ব্রুমের সঙ্গে ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ সালে ড্র করার পর ১৯ ডিসেম্বর সাউদাম্পটনের বিপক্ষে জয়ে শুরু এরপর উলভসের বিপক্ষে ৩ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত টানা ১৫টি প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ জিতেছে সিটি। এরপর নগরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের কাছে হেরে এই ধারা থামে সিটির। তবে তাতে সিটির শিরোপা দৌড় থামেনি। বরংচ তিন ম্যাচ হাতে রেখেই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন গার্দিওলা। গোটা মৌসুম জুড়ে ৩৮টি ম্যাচের মধ্যে ২৭টিতে জয়, ৫টি ড্র'র বিপরীতে হার মাত্র ৬ ম্যাচে। আর তাতেই নিজেদের ইতিহাসের সপ্তম ইংলিশ লিগ জয়। আর শেষ এক দশকে এটি ম্যানচেস্টার সিটির পঞ্চম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়।
ঘরের মাঠে লিগ শিরোপা হাতে পাওয়ার উল্লাসের সঙ্গে সঙ্গে এদিন সিটির আকাশ জুড়ে ছিল বেদনা ঘনঘটা। ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা সার্জিও আগুয়েরো এদিন প্রিমিয়ার লিগে সিটির জার্সিতে নিজের শেষ ম্যাচটি খেলতে নামেন। ২০১১ সালে স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছেড়ে সিটিতে পাড়ি জমান আগুয়েরো। এরপর ম্যানচেস্টারের দলটির ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি তিনি উপভোগ করেছেন বহু ব্যক্তিগত ও দলীয় সাফল্য। সিটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। সিটির হয়ে ৩৮৯ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করতে নেমে আগুয়েরো করেছেন ২৬০টি গোল, নামের পাশে আরও আছে ৭৩টি অ্যাসিস্টও। সিটিজেনদের হয়ে পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি এফএ কাপ, ছয়টি ইংলিশ লিগ কাপ এবং তিনবার জিতেছেন ইংলিশ সুপার কাপও। তবে এবার বিদায় জানাবার পালা। সার্জিও কুন আগুয়েরো সিটি ছাড়ছেন তা নিশ্চিত করেছেন মৌসুমের মাঝপথেই। তাই তো ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যাচ মাঠে গড়ানোর আগেই আগুয়েরোকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এভারটন এবং ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়রা।
এমন উত্তেজনাময় ইপিএল'র দেখা মিলেছিল এক দশক আগে, সেই ২০১১-২০১২ মৌসুমে। সেবার সার্জিও আগুয়েরো শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে সিটিকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। এরপর লেস্টার সিটির রূপকথার মৌসুম বাদ রাখলে প্রিমিয়ার লিগের এমন উত্তেজনাপূর্ণ মৌসুমের দেখা আর মেলেনি। হ্যারি কেইন শেষ রাউন্ডের ম্যাচেই এক গোল করে মোহাম্মদ সালাহকে টপকে গোল্ডেন বুট জিতলেন। আর্সেনাল থেকে লিভারপুল পর্যন্ত মাঝের সাতটি দল নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে খেলেছে ইউরোপীয় টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেওয়ার জন্য। আগেই দ্বিতীয় নিশ্চিত হওয়া ইউনাইটেড দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলেও জয়ে নিয়ে গোটা মৌসুম প্রতিপক্ষের মাঠে অপরাজিত রইল। চ্যাম্পিয়ন সিটিরও কোনো চাপ ছিল না। সেই খেলায় বিদায়ী আগুয়েরো বেঞ্চ থেকে এসে দুই গোল করে ইপিএল এর ইতিহাসে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড করেন মাত্র এক গোলের ব্যবধানে। এমন ফুটবল রোমাঞ্চে ভরপুর ইপিএল শেষ রাউন্ড হয়নি অনেকদিন।