সব

বিবর্তনের ফ্যাশন বান্ধগলা

আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২১, ০৩:২০


উৎসবে ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে প্রথমে মাথায় আসে পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, ফরমাল স্যুটের কথা। এসবের ভিড়ে নতুন করে ট্রেন্ডে এসেছে বান্ধগলা। যেকোনো উৎসবে পরার উপযোগী এ পোশাকের বিশেষত্ব এর নেকলাইন। ঐতিহ্যবাহী পোশাকের বিবর্তনের ফল বান্ধগলা।

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে পুরুষদের পোশাক ছিল আংরাখা। এ থেকে আসে আচকান এবং শেরওয়ানি। ব্রিটিশ ভারতে বিভিন্ন অঞ্চল যেমন রাজস্থান, পাঞ্জাব, দিল্লি, জম্মু, উত্তর প্রদেশ, হায়দরাবাদে রাজবংশ এবং সমাজের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের পরিধেয় হিসেবে ছিল এ দুটি পোশাক। ইতিহাসবিদদের মতে আংরাখা, আচকান এবং শেরওয়ানি- তিনটিই ফ্যাশন ফিউশনের ফল। ব্রিটিশরা ভারতে এলে তাদের প্রভাবে এটি সামনে বোতাম দেওয়া শেরওয়ানিতে পরিণত হয়। ভারতীয় অভিজাতবংশীয় মুসলমানরা বেশি পরত। অন্যদিকে আচকান, যেটি শেরওয়ানি থেকে একটু খাটো, তা উচ্চবংশের হিন্দুদের পরিধান করতে দেখা যেত। আংরাখা বিবর্তনের পর এ দুটি পোশাকেই ব্যবহার করা হয় ম্যান্ডারিন কলার।
এরপরই আবির্ভাব ঘটে বান্ধগলা বা যোধপুরি স্যুটের। ব্রিটিশ শাসনামলে যোধপুর রাজ্যে এর উৎপত্তি। ডিজাইনার স্বয়ং যোধপুরের মহারাজা শ্রী সরদার সিং। এটিকে ধরা হয় এ উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ফিউশন পোশাক হিসেবে। ভারতীয় ও পশ্চিমা পোশাকের নিখুঁত সংমিশ্রণ।
বিখ্যাত ব্রিটিশ বয় রক ব্যান্ড দ্য বিটলস ষাটের দশকে ব্রিটেনে ট্যুরে বান্ধগলা স্যুটের কাছাকাছি ধরনের পোশাক পরেন। তাদের সেই ধূসর রঙের সিম্পল টেইলরড স্যুট খুব তাড়াতাড়ি তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। হয়ে ওঠে তখনকার মড কালচারের ক্ল্যাসিক ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। ১৯৬৫ সালে নিউইয়র্কের শিয়া স্টেডিয়ামের কনসার্টেও দ্য বিটলসকে আবার দেখা যায় একই পোশাকে।
অন্যদিকে, হলিউডে প্রথম ইস্টার্ন ফ্যাশনের আবির্ভাব হয় বান্ধগলা স্যুটের মাধ্যমে। জেমস বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম মুভি ড. নো-তে শন কনারি পরেন পাঁচ বোতামের বাদামি সিল্কের নেহরু জ্যাকেট। একই ছবিতে জোসেফ ওয়াইজম্যানকে দেখা যায় বোতাম ঢাকা চাপা সাদা রঙের টু পিস বান্ধগলা স্যুটে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অফিশিয়াল ড্রেস ছিল টু পিস বান্ধগলা। এ দেশের ইতিহাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে তাঁকে দেখা গেছে এই পোশাকে। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর পরনে ছিল এই স্যুট। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে তিনি ভাষণ দেওয়ার দিন পরেছিলেন কালো বান্ধগলা স্যুট। নেহরুর মতো দেশের বাইরে গেলে তাঁকে এ পোশাকেই বেশি দেখা যেত।
কয়েক দশকে ফ্যাশনে বান্ধগলার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ম্যান্ডারিন কলার আর এর গঠন ঠিক রেখে অন্য বেশ কিছু দিক বদল ঘটিয়ে এসেছে নতুন ধরনের পোশাক। আবার ট্র্যাডিশনাল বান্ধগলা স্যুটে নতুন ফ্যাব্রিক, প্যাটার্ন যোগ করে আপগ্রেডও করা হয়েছে।
যোধপুরি স্যুট বা প্রিন্স কোট নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে বেশি দেখা যায় বরের পোশাক হিসেবে। এ ছাড়া অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবে অনেকেই পরে এই স্যুট। বিয়েতে বরের সাজে রাজকীয় ভাব আনতে চাইলে বেছে নেওয়া যায় ভেলভেট, সিল্ক বা জ্যাকার্ড ফ্যাব্রিকের ওপর এমব্রয়ডারি বান্ধগলা স্যুট।
এখন অনেক তরুণেরই পছন্দ। ম্যান্ডারিন কলারের স্লিম ভার্সন ব্যান্ড কলার দিয়ে লং স্লিভ বান্ধগলা শার্ট বানানো হয়। ক্যাজুয়াল এবং সেমি-ফরমাল পোশাক হিসেবে এই শার্ট পরা যায়। বটম হিসেবে জিনস, চিনো, সাধারণ ফরমাল প্যান্ট- সবই মানায়। বন্ধুদের আড্ডা বা ছোটখাটো পার্টিতে যেমন পরা যায়, তেমনি বড় কোনো ইভেন্টে ফরমাল স্যুটের নিচেও বেশ ভালো দেখাবে।

পোশাক নান্দনিকতায় 'সারা লাইফস্টাইল’

কোথায় কেমন ঈদ পোশাক

পোশাকে বৈশাখের ছটা

আরও BUZZ

আজকের খেলা

আজকের খেলা

কানাডা কোচের মেসিকে হুমকি

ঝগড়ার পর ভুলেও যেসব কাজ করবেন না ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে

ডিএসএলআরের মতো স্মার্টফোনেই ছবি তুলতে সহায়ক ৫ অ্যাপ