ছিপছিপে কোমর আর চোখের চাউনিতে যে কোনো পুরুষ হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারে ভারতের রাজস্থানের ছোট্ট এক গ্রামের মেয়ে মিমি! এলাকাবাসীর কাছে মিমিই পরমসুন্দরী। পাঁচতারা হোটেলের বিনোদনের দায়িত্ব তার হাতেই। সে নায়িকা হতে চায়। বলিউডের ছবিতে অভিনয় করবে। দীপিকা পাড়ূকোন, আনুশকা শর্মা ও আলিয়া ভাটদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখে। রণবীর সিংয়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অনর্গল কথা বলে চলে। হাসিমুখের এই মিমির জীবনে যে কখনও ঝড় আসতে পারে, তা আঁচও করতে পারে না কেউ। একদিন মিমির জীবনে আসে ঝড় আর সংগ্রাম। এই সংগ্রামে মিমি কখনও হেসে, কখনও চোখের জলে, কখনও লড়াই করে ঝড়ের ঝাপটা সামলেও নেয়। এমনই এক কমেডি ড্রামার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বলিউডের নতুন ছবি 'মিমি'। পরিচালক লক্ষ্মণ উতেকার এই ছবিতে খুব সরলভাবে সারোগেসির গল্প বলেছেন।
ছবির গল্পে দেখা যায়, মিমির আশপাশে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায় ভানু। সে মিমিকে প্রস্তাব দেয় এক বিদেশি দম্পতির জন্য সারোগেট মা হওয়ার। মিমি এতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু ভানুর মাধ্যমে ওই দম্পতি মিমিকে ২০ লাখ রুপি দেওয়ার কথা বলে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে অনেক চিন্তাভাবনা করে অবশেষে মিমি রাজি হয় সারোগেট মা হতে। চিকিৎসার মাধ্যমে এক পর্যায়ে অন্তঃস্বত্তা হয় মিমি। সে সময় বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতার ভয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয় অন্যত্র। যখন তার গর্ভের সন্তান বড় হতে থাকে, একপর্যায়ে ওই বিদেশি দম্পতি জানায়, তারা মিমির গর্ভে থাকা শিশুটিকে নিতে আগ্রহী নয়। তখন যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মিমির মাথায়। ফিরে আসে নিজ বাড়িতে। পরিবারের লোকজন মিমিকে অন্তঃসত্ত্বা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অনাগত শিশুর বাবা কে- জানতে চাইলে মিমি ভানুকে দেখিয়ে দেয়।
অবশেষে জন্ম নেয় সেই শিশু। এভাবেই নানা চড়াই-উতরাই আর হাস্যরস পেরিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমার কাহিনি। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কৃতি শ্যানন। ছবিটি দেখে মনে হয় এটি তার জন্যই তৈরি হয়েছে। মিমিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য এরই মধ্যে কৃতি শ্যাননের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সিনেমাবোদ্ধারা। বলিউডে কৃতি এর আগেও প্রমাণ দিয়েছেন তিনি ভালো অভিনেত্রী। যারা কৃতির 'বরেলি কি বরফি' দেখেছেন, তারা একবাক্যে স্বীকার করবেন। ছোট শহরের গল্পের ছবিতে কৃতি যেন একেবারে ঠিকঠাক। 'মিমি' ছবির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটিয়েছেন কৃতি। এই ছবিতে কৃতির সহশিল্পী ভানু চরিত্রে অভিনয় করেছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। তিনি কতটা ভালো অভিনেতা, তা নতুন করে বলার দরকার নেই। পঙ্কজের কমেডি টাইমিং যে কত ভালো তা আবারও তিনি প্রমাণ করলেন। পঙ্কজ জানতেন, এই ছবি একেবারেই কৃতির। কিন্তু সেই ইগোর লড়াইয়ে না গিয়ে বরং কৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন।
মিমি একেবারেই অভিনয়ের ছবি, যার দায়িত্ব শুধুই কৃতি বা পঙ্কজের ওপরে নয়। সহঅভিনেতা হিসেবে মিমির বন্ধু 'সামার' চরিত্রে সাই তামহানকারের অভিনয় বহু দৃশ্যে কৃতির অভিনয়কেও ছাপিয়ে যায়। এর সঙ্গে ঠিকঠাক তাল মিলিয়ে গেছেন মনোজ পাওয়া, সুপ্রিয়া পাঠক। বিদেশি দম্পতির চরিত্রে ইভলিন এডওয়ার্ডস ও আইডনের অভিনয়ও দারুণ। এ আর রহমানের সুর ছবির মুডকে ধরে রাখে। বিশেষ করে 'পরমসুন্দরী' গানটি। এতসব ভালো থাকলেও 'মিমি' ছবির মধ্যে কিছুটা খারাপও রয়েছে। ছবির দ্বিতীয়ভাগের গতি আরও বাড়ালে ভালো হতো। বিশেষ করে ছবির শেষ আধাঘণ্টা একটু বেশিই লম্বা করেছেন পরিচালক, যা তিনি ইচ্ছা করলেও এড়িয়ে যেতে পারতেন। এসব ত্রুটি পাশে রাখলে 'মিমি' দেখার মতো একটা ছবি। 'মিমি' নির্মিত হয়েছে মারাঠি ছবি 'মালা আই ভাচে'র হিন্দি রিমেক। মারাঠি ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। ছবিটি ২৬ জুলাই মুক্তি দেওয়া হয়।