৭ জুলাই বুধবার সকালে বলিউড সিনেমার সিংহপুরুষ দিলীপ কুমার চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাকে নিয়ে লিখেছেন অমিতাভ বচ্চন।
'অভিনয়ের রাজপুত্র', 'ট্র্যাজেডি কিং', 'অনবদ্য শিল্পী', 'কিংবদন্তি'- এমন আরও অনেক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন দিলীপ কুমার। কিন্তু আমি তাকে নায়কদের নায়ক হিসেবেই উল্লেখ করতে চাই। অভিনয়ে নিজেকে ভেঙে প্রতিবার নতুনরূপে পর্দায় তুলে ধরায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। সে কারণেই তার কাল এবং পরবর্তী কয়েক দশকে অনেকে দিলীপ কুমারের পথ অনুসরণ করেছেন। মনের মধ্যে লালন করেছেন তার মতো শিল্পী হয়ে ওঠার বাসনা। দিলীপ কুমারের অন্ধ ভক্ত যারা, তাদের মধ্যে নিজেকেও রাখতে চাই। তার অভিনয়ে মুগ্ধ, ভক্তি আর ভালোবাসার কারণে কাছে থেকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। বাড়তি পাওয়া একসঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ। কিন্তু একটা জিনিস তার কাছ থেকে পেতে চার দশকেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তা হলো, অমর এই অভিনেতার একটি অটোগ্রাফ। সেটাও পেয়েছি একটি নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে।
ঘটনাটা ২০০৫ সালের। সে বছর পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালির 'ব্ল্যাক' ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। যেখানে আমি এবং রানী মুখার্জি অভিনয় করেছিলাম। ছবিটি দেখার জন্য রানীর আমন্ত্রণে স্ত্রী অভিনেত্রী সায়রা বানুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন দিলীপ কুমার। ছবি দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। নিজের সেই অনুভূতি একটি দীর্ঘ চিঠির মাধ্যমে আমাকে জানিয়েছিলেন। অনেক প্রশংসাবাক্য ছাড়াও সেই চিঠির শেষে ছিল দিলীপ কুমারের একটি স্বাক্ষর। এমন প্রাপ্তি আমার কাছে ছিল অভাবনীয়, তাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম। কেননা, এর আগে একাধিকবার অটোগ্রাফের আশায় তার কাছে গিয়েও মুখ খুলতে পারিনি। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে প্রতিবারই অটোগ্রাফ চাইতে নার্ভাস হয়ে পড়েছি। মুখ খুলে মনের কথা বলতে পারিনি। প্রথমবার মা-বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম দক্ষিণ মুম্বাইয়ের একটি হোটেলে, যেখানে বন্ধুদের নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন দিলীপ কুমার।
সেদিন তাকে ঘিরে ভক্তের যে ভিড় জমেছিল, সেই ভিড় ঠেলে অটোগ্রাফ নেওয়ার সুযোগ হয়নি। কিছুকাল পরে আরেকটি সুযোগ এসেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু একটি পার্টি দিয়েছিলেন। দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, রাজ কাপুরের মতো বড় সব তারকা ছিলেন সেই পার্টিতে। সেখানে গিয়েও দিলীপ কুমারের অটোগ্রাফ নেওয়ার ইচ্ছাটা অপূর্ণই থেকে গেছে। এরপর ১৯৮২ সালে রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় 'শক্তি' ছবিতে তার সঙ্গে অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। কাজের ফাঁকে নানা বিষয়ে অনেক কথাও হয়েছে। কিন্তু আমি যে তার কত বড় ভক্ত- সেটাই জানাতে পারিনি। এমনকি অটোগ্রাফ নেওয়ার সুযোগ পেয়েও নিতে পারিনি। সেই আফসোস 'ব্ল্যাক' ছবির প্রিমিয়ার পর্যন্ত থেকেই গিয়েছিল। আজ যখন শুনলাম [৭ জুলাই] বলিউড ছবির ইতিহাসের অনন্য এই নায়ক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, তখন বারবার কেন জানি পুরোনো দিনের স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে উঠছে। আমার মনে হচ্ছে, শুধু অটোগ্রাফ নয়, আরও অনেক চাওয়া ছিল তার কাছে। যে চাওয়া শুধু আমার নয়, সমগ্র বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা