মাণচিত্রের দক্ষিণে নদীবেষ্টিত একটুকরো ভূমি কিংবা দ্বীপ নাম তার ভোলা। আয়তনে খুব ছোট্ট এই জায়গাটির রূপ সৌন্দর্য যেন হাতছানি দেয় ভ্রমণপিপাসুদের। সূদীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে নান্দনিক প্রাচীন স্থাপত্য এ জেলাকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা।
তারুয়া দ্বীপ:
চরফ্যাশন উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় ১৫০ বছর আগে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। এই চরের তারুয়া সমুদ্র সৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন সারি সারি কেওড়া গাছ। অন্য প্রজাতির গাছও আকর্ষণীয়। সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদা বালি আর লাল কাঁকড়ার মিছিল। মাথার ওপর কিংবা বেলাভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। তবে শীতের সময় অতিথি পাখির বিচরণে এক অতি-প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বর্ণিল আলোকচ্ছটা মোহিত করবে যে কাউকে। নাগরিক ব্যস্ততার বন্দি জীবনে অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা একটু সময় করে এখানে আসলে প্রকৃতি তাদের নিরাশ করবে না। এ চরে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, পাতিশেয়াল, বন্যমহিষ-গরু, বনবিড়াল, বন মোরগসহ নানা প্রজাতির প্রাণি রয়েছে। বক, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুঁইসাপ, বেজি, কচ্ছপ নানা ধরনের সাপও আছে এ চরে।
চর কুকরি-মুকরি:
চর কুকরি-মুকরি আরেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ট্রলার বা স্পিডবোটে মাঝারী খালের মধ্য দিয়ে যাওবার সময় দুই পাশের ম্যানগ্রোভ বন দেখে সুন্দরবনের অবয়ব ভেসে ওঠে। পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হবে যেন সুন্দরবনের কোনো অংশ। সুন্দরি, গেওয়া, গরান গাছ এবং শ্বাসমূলীয় গাছের বন এটি। এছাড়া গোলপাতার সমাহারও চোখে পড়ার মতো। কুকরির পূর্ব অংশে নারকেল নদীর পাড় আরও মুগ্ধতার। নদী পাড় যেন শুভ্রতায় মোড়ানো। কারণ সাদা বকের সমারোহ থাকে সেখানে। শীতের সময় অতিথি পাখি এ এলাকাকে দেয় ভিন্নমাত্রা। এ চরে বেড়ানোর জন্য শীতই যথোপযুক্ত।
চর কুকরি-মুকরির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। খালটির নাম ভাড়ানি খাল। মেঘনার বিশাল বুক থেকে বয়ে গিয়ে খালটি পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। এগোলেই ঢাল চর। এরপরই বঙ্গোপসাগর। এখানে উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়া দেখলেই মনে পড়ে যাবে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কথা। এখানে বসেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে কুকরি-মুকরির প্রধান আকর্ষণ সাগরপাড়। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করবে। চর কুকরি-মুকরিতে ডুবন্ত সূর্যের লাল, হলুদ, কমলা আভা সবুজরঙা চর কুকরি-মুকরির বনে ছড়িয়ে পড়ে বনটিকে আরও মায়াবী করে তোলে।
মনপুরা:
সাগরের কোল ঘেঁষে জন্ম নেওয়ায় স্থানীয়দের কাছে মনপুরা 'সাগরকন্যা' হিসেবে পরিচিত। এখানে ভোরে সূর্যের আগমনী বার্তা আর বিকালের পশ্চিম আকাশের সিঁড়ি বেয়ে এক পা দু’পা করে মেঘের বুকে হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। আবার রাতের নতুন শাড়িতে ঘোমটা জড়ানো বধুর মতো নিস্তব্দতায় ছেয়ে যায় পুরো দ্বীপ।
প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো মনপুরা উপজেলা বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশজুড়ে পরিচিত একটি নাম। এখানকার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ৭০০ বছর আগে এখানে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। যার প্রমাণ মেলে মনপুরায় আজও সে সময়ের লোমশ কুকুরের বিচরণ।
প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের অপরুপ লীলাভূমি মনপুরায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আর্কষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানকার হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এছাড়াও রয়েছে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ, তরুলতার সমাহার। বনে আছে হরিণ, বানর, ভাল্লুকসহ নানা বৈচিত্রময় প্রাণি। এর গহীন জঙ্গলে ভয়ঙ্কর কিছু মাংশাসী প্রাণি রয়েছে বলেও জনশ্রুতি আছে।
মনপুরার রয়েছে ৮ থেকে ১০টি বিচ্ছিন্ন চর। এগুলো হচ্ছে চর তাজাম্মল, চর জামশেদ, চর পাতিলা, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর। আর চরগুলো দেখলে মনে হবে কিশোরীর গলায় মুক্তর মালা। এসব চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ
শীত মৌসুমে বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির অতিথি পাখি আসে, এর মধ্যে সিংহভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন মনপুরার চর অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। দেশের অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা
প্রাচীন স্থাপত্য:
ভোলার বোরহানউদ্দিনে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের মেয়ে বিদ্যা সুন্দরী ও জামাতার জন্য এ রাজবাড়ি নির্মাণ করেন।
এগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে অনেক প্রকৌশলী নির্মানশৈলী দেখলে বিস্ময়ে ‘থ’ হয়ে যান। এরকমই স্থাপনার সন্ধান মিলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দক্ষিণে সাঁচড়া ইউনিয়নের গুড়িন্দা বাড়িতে। প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের ছোট মেয়ে বিদ্যা সুন্দরীকে বিয়ে দিয়ে তাদের জন্য ওই রাজবাড়ি নির্মান করেন। কিছু জায়গার পলেস্তারা খসে পড়লেও এর নির্মানশৈলী অবাক করার মতো।