জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা। নামেই এক বনেদি আভাসের ছোঁয়া। তবে, মসলাজাতীয় এই দ্রব্য জাফরান ফুলের শুষ্ক গর্ভমুন্ড থেকে পাওয়া যায়।
আনুমানিক ৩ হাজার ৫০০ বছর ধরে মানুষ এই উদ্ভিদ চাষ ও ব্যবহার করে আসছে। মসলার পাশাপাশি এটি ওষুধ, রং এবং সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। খাবার সুস্বাদু করার জন্য জাফরান অধিক প্রচলিত। বিশেষ করে বিরিয়ানি, কাচ্চি, জর্দা, কালিয়াসহ নানা পদের দামি খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খাবারে এই দ্রব্য ব্যবহৃত হলে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অনেকটাই বেড়ে যায়।
জাফরানকে ইরানে ‘লাল স্বর্ণ’ বা ‘রেড গোল্ড’ নামেও ডাকে। এই দ্রব্য সংগ্রহের পদ্ধতি অন্য যেকোনো মসলা সংগ্রহের প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। জাফরান যখন ভাঙা হয়, তখন এর ভেতর থেকে হলদে আরও একটি রং পাওয়া যায়। এতে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে, যেগুলো পাইক্রোক্রকিন, ক্রসিন ও সাফরানালের মতো দামি। এই তিনটি উপাদান মূলত জাফরানের স্বাদ, রং ও ঘ্রাণ সৃষ্টি করে। এই দ্রব্যের গুণাগুণের উল্লেখ মানে মূলত এই তিনটি উপাদানের উপকারী বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাফরান খাঁটি কি না, সেটা জানা যায় এর গন্ধ থেকে। যদি ঘ্রাণ মিষ্টি আর স্বাদ তেতো হয়, তবে সেটি আসল। এ ছাড়া কয়েকটি জাফরান পানিতে ভিজিয়ে রেখে দেখতে হয় রং ছেড়ে দিচ্ছে কি না, আসলগুলো রং ছড়ালেও লালচে থাকবে, কিন্তু নকলগুলো সাদা হয়ে যাবে।
অতীতে হলুদ-লাল গাঁদাগাছের পাতা, লিলি ফুলের কেশরকে জাফরান হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হতো, কিন্তু সেগুলোর স্বাদ আর বর্ণ ছিল একদম ভিন্ন। অনেক জাফরান একত্র করে সুরাও বানানো হতো। গবেষকেরা দাবি করেন, এই জাফরান আলঝেইমার, ডিপ্রেশন, প্রিমিনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম সমস্যা রোধেও সহায়ক। ছোট্ট একটি মসলা যে এত রোগের প্রতিরোধক, এ তথ্য অনেকেরই অজানা।
জাফরান কফ, কাশি, ঠান্ডা, পাকস্থলীর সমস্যা, অনিদ্রা, গর্ভাশয়ে রক্তপাত, পেটফাঁপা ও হৃদ্রোগের সমস্যা সমাধানে বেশ ভালো কাজ করে। এই দ্রব্যে থাকা ম্যাঙ্গানিজ ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এবং হাড় ও টিস্যু গঠনে সহায়ক। এর ভিটামিন-সি যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধনসামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহৃত হয়। প্রাচীনকালে শরীরের সৌষ্ঠব বাড়ানোর জন্য এই দ্রব্য গায়ে মাখা হতো বলে ইতিহাসবিদদের ধারণা। এ ছাড়া বিউটি পার্লারে রূপচর্চায় জাফরান উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জাফরান শুধু খাবারের স্বাদ এবং রংই বাড়ায় না, এর আরও অনেক গুণ রয়েছে। এর রয়েছে বিস্ময়কর রোগ নিরাময় ক্ষমতা। আছে পটাশিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদপিন্ডের রোগ দূর করে। হজমসংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে জাফরান। এর পটাশিয়াম আমাদের দেহে নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।