যার কথা লিখতে গেলে উপমার কাব্যিকতাও হার মানায়! ৬০ বছরের যাত্রায় জীবনকে সাজিয়েছেন নানা বৈচিত্র্যময়তায়। সেই এক নাম এখনও চায়ের দোকানের আড্ডাবাজিতে জ্বল জ্বল করে। ফুটবল ঈশ্বর নামে যিনি খ্যাত- দিয়েগো ম্যারাদোনা।
রাজার মতো যেন তার জীবন। হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই ব্যক্তিটি হয়ে যান এক নক্ষত্র। ফুটবল রাজ্যে যিনি রাজ করেন। যার প্রতিটি কর্মই ছিলো চমকীয়। সমর্থকদের নানা সময়ে নানাভাবেই মাতিয়ে রাখতেন তিনি। ক্যারিয়ার ছিল ছন্দময় রোমাঞ্চ-সাসপেনশনে ভরপুর। গোটা বিশ্বকে বিস্ময় জাগিয়ে সেই নক্ষত্রের পতন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই বরপুত্রের গমন।
মাঠে তার পায়ের জাদুকরী নৈপুন্যের তাল এখনও চোখে ভাসে। খেলা ছেড়েছেন কবেই, কিন্তু দ্যুতিময়তা ম্লান হয়নি বিন্দু পরিমাণও। ফুটবল দর্শকদের জন্য এই কিংবদন্তি শুধু কিংবদন্তিই নয় মহারাজা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার দেখিয়েছেন তার চমকীয় ছন্দ। ফুটবল ক্যারিয়ার থেকে বিদায় নিলে মাদক গ্রহণের অভিযোগ, কোচের দায়িত্ব থেকে বহিষ্কারের মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে তার এতোটুকুও জৌলুস কমেনি। কখনও কোচ হয়ে আবার কখনও বিতর্কিত আচরণে ভক্তদের মনে ছিল তার অবাধ বিচরণ। যদিও খেলোয়াড় হিসেবে যতটা না দ্যুতি ছড়িয়েছেন কোচ হিসেবে তেমন কোনো কিছুই সফলতা পাননি এই কিংবদন্তি। তাতে তার নামে ছিটেফোঁটাও স্পর্শ পড়েনি, তিনি সেই জাদুকর, জাদুকরী রূপেই ভক্তদের কাছে চিরস্মরণীয়।
তার জীবনের বৈচিত্রতায় রয়েছে অদ্ভূত কিছু কাণ্ডও। সমালোচনার সঙ্গী ছিল তার জীবনগাথা। কখনও সাংবাদিককে বন্দুক হাতে তাড়া করা আবার কখনও সমর্থককে ঢিল ছুঁড়ে আক্রমণ করা -আরও নানা বিতর্কিত শিরোনাম ছিলো তার জীবনের গালিচায়। কিন্তু তাতেও তার ছিল না কোনো ভ্রুক্ষেপ। চলেছেন নিজের মতো করে। সফলতা হাঁকিয়েছেন কোনোরকম পিছুটানের ভয় না করেই। তার অধীনে কোচ হিসেবে ২০১০ বিশ্বকাপে খেলেছিল আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু সেই ব্যর্থতায় একটুও ঢাকা পড়েনি তার কীর্তি।
প্রতিবাদী রূপ ছিলো তার চরিত্রে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সবসময় সোচ্চার। আপোষহীন চরিত্রে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর মতো কণ্ঠ মিলিয়ে আওয়াজ তুলেছেন।
ফুটবল এই কিংবদন্তির বিচরণ এক প্রেরণার স্ফুলিঙ্গের মতো। বিশ্বআসনে তিনি চিরসবুজ। চোখ ধাধানো এই আইকনের চলে যাওয়া ফুটবল জগতের জন্য এক বিশাল শূন্যতা।