বছর ঘুরে আবার এসে গেছে সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শুরু হয়ে গেছে মায়ের আগমনের দিন গোনা। শরৎকালে প্রকৃতির এ অপরূপ মোহনীয় রূপের সঙ্গে বাতাসে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে দুর্গোৎসবের আমেজ। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, করোনাকালীন সময় হলেও যথাসম্ভব নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই চলছে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি। নানা আয়োজনে মেতে উঠেছে পূজামণ্ডপগুলো। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে পূজার সাজের আয়োজনও। মন্দিরে মন্দিরে পড়ছে উলুধ্বনি আর ঢাকে নাচছে কাঠি। পরিপাটি সাজপোশাকে মাকে অঞ্জলি দানেই আসবে পরিতৃপ্তি।
বাঙালির এ উৎসবে সাজসজ্জা আর আয়োজনের কমতি থাকে না। পোশাকের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী গহনাও সাজসজ্জায় জায়গা করে নিচ্ছে। দুর্গার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রমণীদের সাজে গহনাও প্রাধান্য পায়।
আমাদের দেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভাগাভাগি করা হয় সব আনন্দ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সব ধর্মের সবার হয়ে উঠে দেশের যে কোনো উৎসব। সবাই মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে। একইভাবে পূজার সাজে নারীদের শাড়ি, গহনায় লাগে নানান রঙের ছোঁয়া। সব মিলিয়ে বর্ণিল হয়ে উঠে অঙ্গসজ্জা।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে গহনার প্রতিই নারীদের থাকে আলাদা নজর। গহনা নির্বাচনেই লুকিয়ে থাকে সাজের মূল চাবিকাঠি। কেননা, খুবই সাধারণ সাজপোশাকে মুহূর্তেই অনন্য মাত্রা যোগ করতে গহনা সিদ্ধহস্ত। প্রকৃতিতে যদিও শরৎ, এর মধ্যে গরম আবহাওয়ার কারণে এবং উৎসবের সময়ের ভিড়ে সবাই চায় আরামদায়ক সাজপোশাক। পাতলা সুতির কোনো শাড়ির সঙ্গে একটু ব্যতিক্রমী গহনার মেলবন্ধনেই আলাদা করে তোলা যায় নিজেকে। গরমের মধ্যে আরাম এবং নজরকাড়া সাজ দুটোই একসঙ্গে চলে আসে এর মাধ্যমে। আজকের এই আয়োজনে তাই গহনার খুঁটিনাটি নিয়েই কথা হবে। আসুন, জেনে নিই পূজার জন্য গহনার সম্পর্ক।
এবার পূজায় সাবেকি নকশার আমেজের সোনা, তামা কিংবা পিতলের গহনার সঙ্গে নজর কাড়ছে হাতে বানানো গহনাও। উৎসবে তাই বহাল থাকবে এ ধরনের গহনার ফ্যাশন। ডিজাইনাররা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে দেশীয়, ঐতিহ্যবাহী নানান উপকরণের প্রতি। কাঠ, পাট, গামছা এবং বিভিন্ন রকম পুঁতির সংমিশ্রণে হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে নান্দনিক সব গহনা। সঙ্গে আরও যোগ হয় কড়ি, সুতা, ঘুঙুর এবং ক্লে বা মাটির তৈরি মা দুর্গার প্রতিকৃতি। তরুণীদের কাছে এ ধরনের গহনার প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে দিনে দিনে। যে কারণে বর্তমান সময়ে যে কোনো উৎসবেই হাতে তৈরি গহনা খুব চোখে পড়ছে। দেশীয় ঐতিহ্য বজায় রেখে নারীর চিরাচরিত সাজকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হয় গহনার গাঁথুনি। এবার পূজার গহনা কালেকশনে গামছাকে প্রাধান্য দিয়ে এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে মাটির মাতৃমুখ, মেটাল, কাঠ, কড়ি, পাট এবং ঘুঙুর। পূজার আমেজ অনুযায়ী রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে লাল ও সাদা। সনাতনী হলুদ রঙে দুর্গা প্রতিকৃতির সঙ্গে লাল-সাদার মেলবন্ধন যেন দেশীয় ঐতিহ্যেরই আরেক রূপ। আর এর সঙ্গে পাটের যোগ নান্দনিক মাত্রা পেয়েছে। গহনায় কড়ির ব্যবহার সব সময়ই সবার পছন্দের। যে কারণে নকশার সঙ্গে মিল রেখে প্রাকৃতিক কড়ি যোগ করা হয়েছে। পূজায় ভিন্নধর্মী এই গহনাগুলো এবার যোগ করেছে নান্দনিক রূপ।