রহস্যের পেছনে ছুটতে কে না পছন্দ করে? আর পৃথিবীটাই যখন রহস্যময় তখন তো আর কোনো কথাই নেই। এই পৃথিবী যত না সুন্দর ততই রহস্যে ভরপুর। ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে একটি দল আছে যারা বেশ বিপদজনক, ভয়ঙ্কর, শিহরণ জাগায় এমন কিছু অভিজ্ঞতার খোঁজে থাকেন সবসময়। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে যান রোমাঞ্চের খোঁজে। জীবনকে মরণফাঁদে ফেলার ভয় থাকলেও পিছপা হন না।
ডেথ ভ্যালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
রহস্যপ্রেমীদের কাছে এই ডেথ ভ্যালি খুবই পরিচিত এক নাম। পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান এটি। ১৯৭২ সালে এখানকার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল প্রায় ২০০ ফারেনহাইট। যা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিকেও হার মানায়। কিন্তু তবুও ডেথ ভ্যালি দেখতে প্রতিবছর প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ ভিড় করেন।এখানে যেমন রয়েছে রহস্যের আধিক্যতা তেমনি স্থানটি সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের বারবার আকর্ষণ করে।
চলন্ত পাথর কখনো দেখেছেন? যার দেখা মিলবে এই ডেথ ভ্যালিতে। যেখানে পাথরগুলোকে দেখলে মনে হবে এরা নিজেরাই নিজেদের স্থান পরিবর্তন করেছে। পাথরগুলিকে অবশ্য চলমান অবস্থায় কেউ কখনো দেখেনি। কিন্তু বালুর উপর রেখে যাওয়া ছাপ থেকে বোঝা যায় এরা স্থান পরিবর্তন করেছে। কয়েকশ পাউন্ড ওজনের এসব ভারি পাথরগুলো কিভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় সে রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি।
তিন মিলিয়ন একরের বেশি এই মরুভূমিতে রয়েছে বিচিত্র ভুখন্ড, ঐতিহাসিক স্থান, বিপন্ন প্রজাতির গাছপালা ও পশুপাখি। এটি এমনি একটি জায়গা যেখানে মানুষের পদচিহ্নও পর্যটকদের রোমাঞ্চ জাগায়।
বসন্তে ডেথ ভ্যালি হয়ে ওঠে রঙ্গিন। যা বিবর্ণ এই মরুভূমির নামের সম্পূর্ণ বিপরীত। এসময় পাহাড় ও উপত্যকাগুলো সোনালী, বেগুনী, গোলাপী, সাদাসহ নানা রংয়ের ফুলে ভরে ওঠে। সেইসঙ্গে প্রজাপতি, হামিংবার্ড ও মৌমাছিদেরও উড়ে বেড়াতে দেখা যায়।
ভ্যালি অফ ডেথ, কামচাটকা, রাশিয়া
বিপজ্জনক স্থানের মধ্যে আরেকটি রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে এটির অবস্থান। রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তে সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত আগ্নেয় পর্বতময়, তুষারাচ্ছন্ন উপদ্বীপ কামচাটকায় অনেকগুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে। এই উপদ্বীপের পূর্বাংশে রয়েছে কেহিন্নাইক আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরির পাদদেশেই তৈরি হয়েছে এ মৃত্যু উপত্যকা।
গবেষণায় দেখা যায়, এটি মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠার মূল কারণ এখানকার বিষাক্ত বাতাস। আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত গ্যাসই এখানকার বাতাসকে এতটা বিষাক্ত করে তুলেছে। এই বিষাক্ত গ্যাসের কারণে এখানে জীবনধারণ একেবারেই অসম্ভব।
এখানকার মৃত্যু যাত্রা অনেকটা চক্রের মতো। বসন্তের সময় এক প্রকার ছোট চড়ুই পাখি মারা যেতে থাকে। মৃত পাখিদের দেহের গন্ধে আকৃষ্ট হয় শিয়াল, ভলভেরিন, ভালুক, কাক এবং গোল্ডেন ঈগল এবং খাদ্যের সন্ধানে এখানে পাড়ি জমায়। কিন্তু এ মৃত্যু উপত্যকায় একে একে সবাই মারা যায়।
কারো কারো মতে উপত্যকায় গ্যাসের উপাদানগুলি আংশিক পক্ষাঘাত সৃষ্টি করতে পারে, এর ফলে প্রাণীগুলো নড়াচড়া বা চলাফেরা করতে পারে না। তবে এটি এখনও প্রমাণিত হয়নি।
তবু কামচাটকার ভ্যালি অব ডেথ তার অপরূপ সৌন্দর্যে মৃত্যুর হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে।
দ্য দানাকালি ডেজার্ট
এটি ইথিওপিয়ার ইরিত্রিয়ায় অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। মরুভূমির মাঝে রয়েছে লাভার হ্রদ। বিশাল মরুভূমির মাঝে অনেক জায়গা থেকে ক্রমাগত লাভা নির্গত হয়। সেই সাথে বেরিয়ে আসে বিষাক্ত গ্যাস। এই বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পুরো এলাকার বাতাস ভারী করে তুলেছে। ভূতাত্ত্বিক এমন প্রতিকূল পরিবেশের জন্য অনেকে এ মরুভূমিকে ‘এলিয়েনদের স্থান’ বলে থাকেন।
তবু পর্যটকের অভাব নেই। দানাকালি মরুভূমির সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই। তবে চাইলেই যে কেউ একা যেতে পারবেন না এখানে। ভয়ংকর সুন্দর এ মরুভূমি উপভোগ করতে চাইলে সাথে অভিজ্ঞ গাইড নিয়ে যেতে হবে।