বিভিন্ন ক্লাব ও চলচ্চিত্রাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরীমনি নিয়মিত রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব ও বারে যাতায়াত করেন। সেক্ষেত্রে নিয়মিতই তিনি মধ্যরাতেই কোনো না কোনো সঙ্গীকে নিয়ে এসব বার ও ক্লাবে গিয়ে থাকেন। উত্তরা ক্লাব, গুলশান কমিউনিটি ক্লাব, গুলশান ক্লাব, শাহীন ক্লাবসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি ক্লাবে তার যাতায়াত ছিল নিয়মিত। আর যেখানেই যেতেন, সেখানেই কোনো না কোনো সমস্যা তৈরি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি বিল না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এর মধ্যে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই পরীমনিকে ঢাকার ক্লাব ও বারগুলোতে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আলোচনায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না এলেও মৌখিকভাবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ঢাকার একটি নামকরা ক্লাবের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, পরীমনিকে ক্লাবের কোনো ফাংশনে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। ক্লাবের কোনো সদস্য পরীমনিকে অতিথি হিসেবেও নিয়ে আসতে পারবেন না। সব সদস্যদের এ বিষয়ে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।
চলচ্চিত্রাঙ্গনের অন্য কারও জন্য এই নিষেধাজ্ঞা নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু পরীমনির জন্য। শুধু আমাদের ক্লাব নয়, ঢাকার সব ক্লাবই এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবে।
বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে— পরীমনির এমন অভিযোগ মিথ্যা বলে মনে করছেন এই ক্লাব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে— পরীমনি নিজেই ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়েছেন এবং মাতাল অবস্থায় চিৎকার-চেঁচামেচি করেছেন। ক্লাব পরিচালকদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। ক্লাব থেকে ফিরে আবার উল্টো ওই ক্লাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তার মামলায় একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রেফতারও হয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি ক্লাবে এলেই ঝামেলা হতে পারে বলেই তাকে আপাতত সব বার ও ক্লাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, পরীমনি এই ক্লাবের সদস্য না হওয়ায় এমনিতেই ক্লাবে আসতে পারবেন না। সেদিন একজন সদস্যের অতিথি হিসেবে আসতে চেয়েছিলেন। ওই সময় কাউকে ঢুকতে না দেওয়া হলেও তার পরিচয় ভেবেই ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। তবু তিনি যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে আর তিনি এই ক্লাবে প্রবেশ করতে পারবেন না। আমাদের সব সদস্যদেরও বলা হয়েছে, তাকে যেন কেউ অতিথি হিসেবে ক্লাবে না আনেন।
যে ঢাকা বোট ক্লাবকে নিয়ে পরীমনির অভিযোগ, সেখানকার কোনো কর্মকর্তা সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ক্লাবের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, আপাতত ওই ঘটনার পর ক্লাবে বহিরাগত কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আর পরীমনির জন্যও ওই ক্লাবের দরজা বন্ধ।
বোট ক্লাবের ওই সদস্য বলেন, পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে আর কোনোদিন প্রবেশ করতে পারবেন না। কোটি টাকা দিলেও এই ক্লাবের সদস্য হতে পারবেন না। শুধু এই ক্লাব নয়, কয়েকদিনের মধ্যে উত্তরা ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, অল কমিউনিটি ক্লাব, র্যাডিসন বার, রিজেন্সি বার, ফুয়াং বার, পিকক, ড্রাগন, রুচিতা, ডিপিএল, ডিম্পল, সালামার, রেড বাটন, সিউল, এরাম, ওয়েস্টিন, গুলশান ক্লাব, শাহীন ক্লাবসহ ঢাকার সব ধরনের বার ও ক্লাবে পরীমনিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে পরীমনির মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরীমনির ঘটনায় এর আগে ব্রিফিং করে আসা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।