সব

দুর্গ নগরীতে একদিন

আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২১, ১৪:১৪

 

উয়ারী ও বটেশ্বর দুটি আলাদা গ্রাম। শহরের নাগরিক ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে ইতিহাসে একটু ডুব দিতে ঘুরে আসতে পারেন গ্রাম দুটি থেকে। ইতিহাসের পাতায় যে ভিন্ন এক গুরুত্ব দিয়ে গ্রাম দুটির নাম লেখা রয়েছে। নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় উয়ারী এবং বটেশ্বর পাশাপাশি দুটো গ্রাম। উয়ারী বটেশ্বর যেতে পথের দু'ধারে অসাধারণ সব প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনার ভ্রমণের সময় দ্রুত চলে যাবে। ঘিরে রাখা প্রত্নতত্ত্ব স্থানে যাওয়ার আগেই চোখে পড়বে নানা খনন কার্যক্রম। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, এটি এক সময় মাটির নিচের দুর্গ-নগরী ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুসারে এগুলো প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের পুরোনো নিদর্শন।

এই গ্রাম দুটোতে প্রায়ই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান পাওয়া যেত। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকরা মাটি খননকালে একটি পাত্রে সঞ্চিত মুদ্রা ভান্ডার পায়। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এগুলো ছিল বঙ্গভারতের প্রাচীনতম রৌপ্য মুদ্রা। এই ছিল উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের প্রথম চেষ্টা।

অনাবিস্কৃত এই উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সম্ভাবনা বহুদিন থেকেই গুঞ্জরিত হচ্ছিল। ১৯৩০ সালের দিকে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান প্রথম উয়ারী-বটেশ্বরকে সুধী সমাজের নজরে আনেন। পরে তার ছেলে হাবিবুল্লা পাঠান স্থানটির গুরুত্ব তুলে ধরে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বারবারই এ ব্যাপারে সোচ্চার থাকলেও হচ্ছিল না খননকাজ। অবশেষে ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় খননকাজ। খননকাজে নেতৃত্ব দেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। পুরো খননকাজেই সক্রিয় ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নবস্তু খননে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর, বন্দর, রাস্তা, পার্শ্ব-রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, স্বল্প-মূল্যবান পাথর ও কাচের পুঁতি, মুদ্রা-ভান্ডারসহ উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা আবিস্কৃত হয়েছে। উল্টো পিরামিড আকৃতির স্থাপত্যটি নিয়েও বিশেষজ্ঞ স্থপতিরা ইতোমধ্যে গবেষণা।

গিরিশ চন্দ্র সেন শুধু নরসিংদী বা বাংলাদেশে নয়, গোটা উপমহাদেশেই একটি অতি পরিচিত নাম। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় লোকজনই ভুলতে বসেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ মানুষটিকে। তার প্রধান পরিচয় ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফের প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে। তখন প্রায় ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল যে, মূলভাষা থেকে অনূদিত হলে গ্রন্থটির পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হবে। পবিত্র কোরআন সম্পর্কেও এমন ধারণা ছিল। এ কারণে অনেক মুসলিম মনীষী এর বঙ্গানুবাদ করতে সাহস পাননি। গিরিশ চন্দ্র সেনই অন্য ধর্মাবলম্বী হয়েও এই ভয়কে প্রথম জয় করেন।দেশের দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন গিরিশ চন্দ্রের বাড়ি দেখার জন্য ছুটে এলেও হতাশ হয়ে ফিরে যেতেন একটা সময়ে। এই এলাকার বর্তমান প্রজন্ম যেমন জানে না গিরিশ চন্দ্র সম্পর্কে, তেমনি স্থানীয় লোকজনও ভুলতে বসেছিলেন তার ইতিহাস। ২০১৫ সালে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণ ও একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়। এরপর সরকারের নিয়ন্ত্রণে ও দিকনির্দেশনায় সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসযোগে (বিআরটিসি, অনন্যা সুপার, যাতায়াত, হাওর বিলাশ অথবা সিলেট-কিশোরগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে কোনো বাসে) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে মরজাল অথবা বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজিযোগে বেলাব বাজার হয়ে রিকশায় উয়ারী-বটেশ্বর অথবা মরজাল/বারৈচা থেকে সরাসরি সিএনজিযোগে উয়ারী-বটেশ্বর যাওয়া য়ায়।

বেহুলার বাসর ঘর

আরও BUZZ

আজকের খেলা

আজকের খেলা

কানাডা কোচের মেসিকে হুমকি

ঝগড়ার পর ভুলেও যেসব কাজ করবেন না ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে

ডিএসএলআরের মতো স্মার্টফোনেই ছবি তুলতে সহায়ক ৫ অ্যাপ